ফরচুন সুজে শ্রমিকদের বিক্ষোভ-কারখানা ভাঙচুর

পুলিশসহ আহত ১০

প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  বরিশাল ব্যুরো

বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষের সূত্র ধরে জুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফরচুন সুজ লিমিটেডের কারখানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যরা শ্রমিকদের ওপর গুলি করেছেন। এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহতদের চারজনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপরদিকে শ্রমিকদের ছোড়া ইট-পাটকেলের আঘাতে কাউনিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান এবং পাঁচ আনসার সদস্যসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুরে বরিশাল বিসিক কম্পাউন্ডে অবস্থিত কারখানায় এ ঘটনা ঘটে। কারখানাটি বিপিএলে ফরচুন বরিশাল টিমের মালিক ও বিসিক শিল্পনগরী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মিজানুর রহমানের। আন্দোলনকারী শ্রমিক নিপা বলেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কথা দিয়েছিল প্রতি মাসের ৮ তারিখের মধ্যে বেতন দেবে। কিন্তু তা না দিয়ে এক মাসের বেতন পরের মাসের ২৫ তারিখেরও পরে দেয়। আমরা ফরচুন সুজের কাছে দুই মাসের বেতন পাব। আজকে সেই বেতন চাইতে গেলে কোম্পানি দুই মাসের বেতন না দিয়ে ১৫ দিনের বেতন দিতে রাজি হয়। এতে কিছু শ্রমিক কারখানা থেকে বেড় হয়ে যেতে চাইলে আনসার সদস্যরা বাধা দেন। তারা শ্রমিকদের ধরে ক্যাম্পে নিয়ে মারধর করেন। মারধরের এক পর্যায়ে গুলিও করেন আনসার সদস্যরা। অন্য শ্রমিকরা অভিযোগ করে বলেন, মাসের ১০ তারিখ বেতন দেওয়ার কথা বলে আমাদের চাকরি দেওয়া হলেও তা মানা হয়নি কখনও। প্রথম দিকে মাসের ১৫ তারিখে বেতন দিত। সেখান থেকে যায় ২০ তারিখে। আর এ মাসে তো ২৩ তারিখ পার হলেও বেতন পায়নি কোনো শ্রমিকই। মাস শেষে এখন বলা হচ্ছে অর্ধেক বেতন নেওয়ার কথা, বাকি অর্ধেক আগামী মাসের ৩০ তারিখে দেওয়ার কথা বলছে। শ্রমিকরা আরো বলেন, পেটের ক্ষুধায় চাকরিতে এসে ২ মাস শেষে যদি হাফ বেতন দেয় তাহলে কীভাবে ঘরভাড়া দেব, দোকানের বকেয়া পরিশোধ করব? তারা তো আমাদের মারবে। আর সেই টাকা চাইতে গিয়ে আমাদের মারধর করা হয়েছে, গুলি করা হয়েছে। আন্দোলনকারী শ্রমিক ইউনুস বলেন, মাসের ২৩ তারিখ হলেও বেতনের খবর নেই। এখন বেতন চাইতে গিয়ে আমাদের ওপর গুলি চালানো হলো। ৪/৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। শ্রমিকদের যখন মারধর করে তখন ফরচুন সুজের মালিক পক্ষের লোকজন ঘটনাস্থলে ছিল। তারাই আনসারদের শিখিয়ে দিয়েছেন বেতন চাইলে গুলি করবি! শ্রমিক নাসরিন বলেন, বেতন চেয়েছি, বেতন দেবে না। ভালো কথা, কিন্তু আমার শ্রমিক ভাইদের মারবে কেন? নিচতলায় গেটের কাছে সহকর্মীদের ওপর হামলার খবর শুনে ভেতরের বিভিন্ন তলা থেকে শ্রমিকরা বেরিয়ে আসতে চাইলেও প্রথমে মালিকপক্ষের লোকজন ও কর্মকর্তারা দেয়নি। তারা নানানভাবে আমাদের গালিগালাজ করেন। পরে সবাই জড়ো হয়ে কারখানার গেটে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছি। তখন হয়তো অতি উৎসাহী কেউ কেউ কারখানায় ইট মেরে জানালার গ্লাস ভেঙেছে, শ্রমিকরা কোনো হামলার ঘটনা ঘটায়নি। তবে ফরচুন সুজের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য (এপিসি) ইউসুফ আলী বলেন, শ্রমিকরা কারখানার কাছে বেতন পাবে। তারা আন্দোলনে নেমে প্রথমেই এসে অতর্কিতভাবে আমাদের আনসার সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। পুরো ক্যাম্পে হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে মোবাইল, টাকা-পয়সা নিয়ে যায় শ্রমিকরা। পরে তারা ম্যাগাজিন রুমে হামলা চালাতে গেলে ওপরের নির্দেশক্রমে আমরা ফায়ার করেছি। তিনি বলেন, শ্রমিকদের হামলায় আমাদের ৫-৭ জন সদস্য আহত হয়েছেন, আমরা বাইরে গিয়ে কোনো গুলি করিনি।