ঘূর্ণিঝড় রিমালে ভেসে গেছে খুলনার পাইকগাছার দেলুটি ইউনিয়নের অধিকাংশ ঘরবাড়ি-জিনিসপত্র। এখনো অনেকের ঘরে জোয়ারের পানি রয়েছে। পানিতে থৈথৈ করছে ঘরসহ পুরোগ্রামে। চারদিকে এত পানিতে সারা দিন শরীর ভেজা থাকলেও কোথাও এতটুকু খাবার পানি নেই। অনেক দূর হেঁটে গিয়ে রাস্তার ওপর মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান থেকে খাবার পানি আনতে হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় যা অত্যন্ত অপ্রতুল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২২নং পোল্ডারের আওতাধীন এই ১৩টি গ্রাম রিমালে সর্বোচ্চ ক্ষতির জনপদগুলোর একটি। বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি না থাকায় গ্রামগুলোর মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভদ্রা নদীর বাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১৩ গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ এখন দিনে দুবার জোয়ারের পানিতে ভাসছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত স্থানীয়রা একাধিকবার রিং বাঁধ নির্মাণের একাধিক প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালালেও বারবার জোয়ারের পানি নির্মাণাধীন বাঁধ ভেঙে নতুন করে আবার প্লাবিত করছে গ্রাম। এ অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে বাঁধ নির্মাণকাজ। সঙ্গে যোগ দিয়েছেন গ্রামবাসী। শুধু পাইকগাছার ১৩টি গ্রাম নয়- দাকোপ, কয়রাসহ খুলনা উপকূলের ৬৮টি ইউনিয়নের অবস্থা প্রায় একই রকম। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে খুলনার উপকূলের চারদিক পানি আর পানি। থাকলেও কোথাও একফোঁটা খাবার পানি নেই। উচ্চ জলোচ্ছ্বাসে মিঠা পানির সব আধারগুলোতেই ঢুকে পড়েছে লবণ। শুধু লিটু সরদার বা তার স্ত্রী কল্যাণী সরদার নয়, এই চিত্র খুলনার পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ১৩টি গ্রাম পুরো উপকূলবাসীর।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলাসহ সাতক্ষীরার আশাশুনি, শ্যামনগর ও বাগেরহাটের শরণখোলায় ৬৮টি ইউনিয়ন এবং দুটি পৌরসভায় লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি। পরিপূর্ণ বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় রিমালের চারদিন পরেও এখনো জোয়ারের পানিতে ভেসে যাচ্ছে সব কিছু। গতকাল বৃহস্পতিবার আবারও ভাঙনের মুখে পড়েছে কয়রার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের দশালিয়া গ্রামটি। এই গ্রামের ১৫ হাজার মানুষের খাবার পানির তীব্র সংকট চলছে। শরণখোলার রায়েন্দাতে কয়েকটি গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে খুলনার দাকোপ উপজেলার তিলডাঙ্গা এবং সুতারখালি ইউনিয়নের মানুষের খাবার পানির আধার নষ্ট করেছে রিমাল। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে যে ট্যাংক এ রাখা হতো বেশিরভাগ ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অবশিষ্ট পানি নষ্ট হয়েছে। সুতারখালি চেয়ারম্যানবাড়ি পুকুরসহ মিঠা পানির আধার কয়েকটি পুকুর থাকলেও রিমালে সবগুলো পুকুরের পানি এখন লবণাক্ত। ফলে এসব এলাকার মানুষের খাবার পানির জন্য হাহাকার চলছে।