কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরীর বিরুদ্ধে নির্যাতন, অত্যাচার এবং বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ এনে বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। নব্বই দশকে নিজ বাড়িলাগোয়া উপজেলা ছাত্র শিবিরের মেচ পরিচালনার পাশাপাশি শিবির ক্যাডার হিসেবে উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা এরশাদকে দিন-দুপুরে হত্যা করেছিল সোহেল। এ ঘটনায় মামলাটি নানাভাবে প্রভাবিত করে দল ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেন সোহেল জাহান চৌধুরী। এরপরই ত্যাগী আওয়ামী লীগ পরিবার ও কর্মী এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো বেছে বেছে প্রহার ও হামলা করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন তিনি। গতকাল দুপুরে কক্সবাজার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স হলরুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের জেলা সভাপতি নুরুল হাকিম নুকী লিখিত বক্তব্যে এমন অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে তিনি আরো বলেন, সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনি (নুকী) ও সোহেল জাহান চৌধুরী অন্য প্রার্থীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নুকীর ওয়ার্ড থেকে নানাভাবে জিম্মি করে আগের দিনে ভোট নিজের করে নিতেন সোহেল ও তার বাবা। এবার সেই ওয়ার্ডে নুকী প্রার্থী হওয়ায় ভোট ছিনিয়ে নিতে পারবে না দেখে নুকীর সাথে প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন সোহেল। কিন্তু এরপরও নির্বাচনে কূটকৌশলে চেয়ারম্যান হিসেবে জয় পান তিনি। এরপরও ক্ষোভ কাটেনি সোহেলের। ইউপি নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনে এক প্রার্থীর পক্ষে এজেন্ট হয়ে একই ওয়ার্ডে এসে প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন। এ সময় শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রদান নিশ্চিত করতে বলায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সোহেল তার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে নুকীর নিজ ও এলাকার এক ছোট ভাইয়ের ওপর হামলা করে। তারা পালিয়ে আত্মগোপনে গেলে তাদের বসতবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। নির্যাতন করা হয় বাড়ির নারীদেরও। রক্ষা করতে এগিয়ে আসা স্থানীয়রাও তাদের মারধরের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনা ভিডিও ধারণ এবং প্রচার করায় এক নারী ও এক গণমাধ্যমকর্মীকেও মারধর করা হয় বলে দাবি করেছেন তিনি। এসব ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলেও ওসি আমাদের ফিরিয়ে দেয়। পরে আদালতের নির্দেশে দ্রুত বিচার আইনে নিয়মিত মামলা রুজু হলেও চেয়ারম্যান হিসেবে সোহেল জাহান শপথ গ্রহণ করেছেন- প্রকাশ্যে ঘুরছেন, রহস্যজনক কারণে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তার দাবি ১৯৭১ সালে সোহেল জাহানের বাবা শাহজাহান চৌধুরী লুতু মিয়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিলেন। এখন তার ছেলে সোহেলও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ওপর হামলা চালাচ্ছে। নব্বই দশকের শেষ দিকে ছাত্রলীগ নেতা এরশাদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করেন ততকালীন শিবির ক্যাডার সোহেল ও মহসিন। দুর্ভাগ্য হলো এক সময়ের দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার আমাদেরই কারো না কারো হাত ধরে এখন আওয়ামী লীগের নেতা বনেছেন। গায়ে দিচ্ছেন মুজিব কোট। সংবাদ সম্মেলনে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন কক্সবাজার জয়বাংলা বাহিনীর প্রধান ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার কামাল হোসেন চৌধুরী বলেন, স্বাধীন দেশে একটি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে দিনের বেলা ন্যক্কারজনকভাবে হামলা চালিয়ে রাতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া, পরবর্তীতে হত্যার হুমকি কখনো মেনে নেয়া যায় না। এটা প্রমাণ করে, জামায়াত-শিবিরের রক্ত কখনো বদলায় না। তারা আমাদের ভেতর ঢুকে বেছে বেছে আমাদেরই হামলা করছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরীকে গ্রেফতার করে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার আলতাফ হোসেন, দপ্তর কমান্ডার সুনীল বডুয়া এবং মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডার নেতারাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঈদগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল জাহান চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, শপথের পর তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে এসেছেন।