ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

গরুর হাট কাঁপাতে প্রস্তুত নকলার ১৮ মণের ‘নবাব’

গরুর হাট কাঁপাতে প্রস্তুত নকলার ১৮ মণের ‘নবাব’

মুসলিম জাহানের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান ঈদুল আজহা। দিন যত যাচ্ছে, ঈদ ততই ঘুণিয়ে আসছে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে সারাদেশের মতো শেরপুরের নকলা উপজেলার পশুখামারি ও শখের বশে পশু পালনকারিরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের পশু বিক্রি করা নিয়ে। এবার কোরবানির পশুর হাট কাঁপাতে আসছে নকলার ‘নবাব’ নামে বিশালদেহী দেশী ষাঁড়। কালচে সাদা রঙের ও সুঠাম দেহের অধিকারী দেশী জাতের ষাঁড় ‘নবাব’ উপজেলার পাঠাকাটা ইউনিয়নের পলাশকান্দি গ্রামের কাজী বাড়ির কাজিম উদ্দিনের ছেলে ফিরোজ মিয়ার পালিত ষাঁড়ের নাম। নবাব নাম রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে ফিরোজ মিয়াসহ তার পরিবারের সদস্যরা জানান, বাছুর অবস্থা থেকেই শান্ত স্বভাবের এটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে। ষাঁড়টি কখনো গায়ে মল-মূত্র লাগাতে দেয় না। পরিষ্কার জায়গা ছাড়া সে শুইতে পর্যন্ত চায় না। তাই এ বিশালদেহী এ ষাঁড়টির নাম ছোটবেলাই রাখা হয়েছে নবাব। তারা বলেন, শখের বশে পালিত ষাঁড়টি শতভাগ দেশীয় জাতের। তাদের দেখা দেশীয় ষাঁড়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় দেশী ষাঁড় এটি। নবাবের বর্তমান দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ ফুট এবং ওজন প্রায় ১৮ মণ (৭২০ কেজি)। অতীতে শতভাগ দেশীয় জাতের এতবড় ষাঁড় দেখেনি বলে স্থানীয় অনেকে জানান।

শান্ত প্রকৃতির নবাবকে দেখতে ফিরোজের বাড়িতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার মানুষজন ভিড় করেন। কেউ প্রাইভেট কারে, কেউবা মোটরসাইকেলে, আবার কেউ কেউ ভাড়ায় কোনো পরিবহণ দিয়ে ষাঁড়টি দেখতে আসেন বলে ফিরোজ মিয়া জানান। তিনি জানান, তার বাড়িতে অপরিচিত কেউ গেলেই স্থানীয়রা মনে করেন আগতরা হয়তোবা নবাবকে কিনতে এসেছেন। তাই মুহূর্তের মধ্যে ভিড় জমিয়ে ফেলেন স্থানীয় জনগণ ও দর্শনার্থীরা। ষাঁড়টির মালিক ফিরোজ মিয়া বলেন, নবাবকে মোটাতাজাকরণের জন্য কোম্পানির বা কৃত্তিম কোনো প্রকার ফিড খাওয়ানো হয়নি। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাইয়ে নবাবকে বড় করেছি। নবাবকে বর্তমান অবস্থায় আনতে তার সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে ৩ বছর। তিনি আরো বলেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ ইসহাক আলী এর সঙ্গে নবাবের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি ওজন ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক (ব্যালেন্সড) সুষম খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তাতে অর্থ ও ঝুঁকি দুটোই কম থাকে এবং নিরাপদ মাংস উৎপাদন সহজ হয়। তাই নবাবের খাদ্য তালিকায় পরিমিত পরিমাণে সবুজ ঘাস, খড়, গমের ভুষি, ভুট্টা ভাঙা, সরিষার খৈল, চিটা গুড়, মিষ্টি লাউ, গোল আলু, চালের কুড়া, লবণ ও প্রয়োজন মতো পরিষ্কার পানি রাখা হয়েছে। তাছাড়া নবাবকে নিয়মিত গোসল করানো, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঘরে রাখা, ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত কিছু সময় হাঁটানো, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রুটিন মতো ভ্যাকসিন দেওয়া ও কৃমির ওষুধ খাওয়ানোসহ সবকিছুই করা হচ্ছে- দেশীয় ব্যবস্থাপনায়। মোটাতাজা ও আকর্ষণীয় করতে কোনো প্রকার ক্ষতিকর ওষুধ বা ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়নি বলেও জানান নবাবের লালন-পালনকারী ফিরোজ মিয়াসহ তার পরিবারের সদস্যরা। নবাবের বিক্রি দাম নিয়ে তিনি বলেন, বাজার মূল্য অনুযায়ী বিক্রি করতে হবে। যেকোনো পশুর দাম সাধারণত ক্রেতা ও পশু সরবরাহের উপর নির্ভর করে। তবে আমি আমার নবাবের দাম প্রথমে ১০ লাখ টাকা চাইলেও, বিভিন্ন বিষয়টি বিবেচনায় রেখে আপাতত ৭ লাখ টাকা দাম চাচ্ছি। তবে ক্রেতার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কিছু ছাড় দিয়ে হলেও বিক্রি করে দিবেন বলে তিনি জানান। দূরের কেউ কিনতে আগ্রহী নবাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ফিরোজ মিয়ার ০১৯৩৬-১৩৮১৭৪ এই নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, গত বছর কোরবানি ঈদের বাজারে বিক্রি করার উদ্দেশ্যে বাজারে নিয়ে গেল, ন্যায্য দাম না উঠায় বিক্রি করেননি। তবে এ বছর আগ্রহী ক্রেতার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিক্রি হয়ে যাবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। তার পালিত প্রিয় নবাবকে শেরপুর জেলার কারো কাছে বিক্রি করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যয় ও পরিশ্রমের সঠিক মূল্য পেলে শেরপুর জেলার কারো কাছে বিক্রি করতে পারলে আমি বরং খুশি হবো। নতুবা অবশ্যই বাইরের কোনো জেলা বা বিভাগীয় শহরে বিক্রি করতে হবে। তাছাড়া ন্যায্য মূল্য পেলে ভবিষ্যতে এমন ষাঁড় লালন-পালনে চেষ্টা করব। তাতে আমার দেখাদেখি এলাকার অনেক বেকার যুবক ষাঁড় লালন-পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজে পাবেন বলে তিনি মনে করেন। নবাবকে দেখতে আসা পলাশকান্দী এলাকার ফজলুল হক ও কলাপাড়া এলাকার ছাইদুল হক জানান, ষাঁড়টির নাম নবাব হলেও, সে আসলেই নবাব। তার গায়ে কেউ কখনো কোনো প্রকার ময়লা দেখেনি। সরেজমিন যে কেউ নবাবকে কিনার উদ্দেশ্যে দেখলে তার পছন্দ হবেই বলে তারা মনে করেন। কোনো কারণে পশুর দাম কমে গেলেও নবাবের দাম ৫ লাখ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা হবে বলে তারা আশাব্যক্ত করেন। এছাড়া টালকী ইউনিয়নের বাবুল মিয়ার ষাঁড়টির ওজন প্রায় হাজার কেজি ছিল, তবে তা বিক্রি হয়ে গেছে। বড় আরো কিছু ষাঁড়ের মধ্যে নকলা পৌরসভার কায়দা এলাকার পারভেজের খামারে, গৌড়দ্বার ইউনিয়নের ছাতুগাঁও এলাকার একটি খামারে ও টালকী ইউনিয়নের চাঁনবাড়ি এলাকার একটি খামারে বড় ষাঁড় রয়েছে বলে সরেজমিন দেখা গেছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত