খাগড়াছড়ির পথে পথে পাহাড়ি কাঁঠালের পসরা
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
চলছে মধুমাস খ্যাত জ্যৈষ্ঠ মাস। কাঁঠাল, আম, লিচুসহ বাহারি নানা ফলের সমারোহে মেতে উঠেছে প্রকৃতি। দেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহর পর ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের মধ্যেও থেমে নেই মিষ্টি ফল কাঁঠালের আস্বাদন। তবে গ্রামে এ মৌসুমে জামাই বরণ করার পৌরাণিক রীতি আজও দেখা যায় কালেভদ্রে। মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৪০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ করা হয়। সম্ভাব্য উৎপাদন ২১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। এ বছর বেড়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫৬০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ করা হয়েছে সম্ভাব্য উৎপাদন ২২ হাজার ৬৪০ মেট্রিক টন। মাটিরাঙ্গায় বিভিন্ন পাহাড়ের চূড়া, ও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বিভিন্ন পরিবহনে চড়ে কাঁঠাল বিক্রির উদ্দেশ্যে মাটিরাঙ্গা বাজারে জড়ো হন বাগান মালিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এদিকে পাহাড়ের কাঁঠাল বেশ সুস্বাদু এবং শতভাগ ফরমালিনমুক্ত বিধায় দেশের অন্যত্র এ কাঁঠাল বেশ জনপ্রিয়। তাই, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা মাটিরাঙ্গায় আসেন কাঁঠাল কিনতে। তাছাড়া মাটিরাঙ্গা পর্যটন এলাকা হওয়ার দরুণ বহু পর্যটক তাদের স্ব-স্ব পরিবহন থামিয়ে দুয়েকটি কাঁঠাল কিনতে ভুলেও যেন ভুল করেন না। প্রতিটি কাঁঠালের স্তূপ পাইকারি দামে বিক্রি করা হয়। আকার ও মানভেদে খুচরা মূল্যে প্রতিটি কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। আর ছোট সাইজের কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। তবে বড় সাইজের কাঁঠালের চাহিদা বেশি। এ বছর কাঁঠালের ফলন কম দামেও সস্তা বলে মনে করেন বাগান মালিকরা।
মাটিরাঙ্গায় সাপ্তাহিক হাটের দিন শনিবার হলেও কাঁঠাল বাজার বসে শুক্রবার। এদিনে কাঁঠাল বেচাবিক্রি হয় ধুমছে। মাটিরাঙ্গা বাজার ঘুরে দেখা মিলে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুপাশে। প্রায় ১ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে কাঁঠালের বাজার। মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ইজারাদার প্রতিনিধি হজরত আলী বলেন, প্রতি সপ্তাহে ছোট-বড় প্রায় ৩০টি কাঁঠালের গাড়ি দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। একটি বড় গাড়িতে ২ হাজার কাঁঠালের ধারণক্ষমতা থাকে। গতবারের তুলনায় এবার কাঁঠালের ফলন কম বলে তিনি মনে করেন। স্থানীয় কাঁঠাল ব্যবসায়ী জালাল মিয়া বলেন, এ বছর কাঁঠালের দাম কম মানুষ এখন নতুন করে কাঁঠাল বাগান করেন না। কাঁঠাল বাগান কেটে আম লিচুর বাগান করেন। তবে দাম কম হলেও কাঁঠালের ফলন ভালো হলে লোকসান গুণতে হয় না। ক্রেতা তারিফ মিয়া বলেন, বাজারে এখন বিভিন্ন ধরনের গ্রীষ্মকালীন ফলে সয়লাব। আমণ্ডলিচুর সঙ্গে কাঁঠালও কিনেছি।
আত্মীয়ের বাড়িতে কাঁঠাল পাঠাবো বলে আরো কিছু কিনব। পৌর কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলী বলেন, পাহাড়ে কাঁঠাল বিক্রি করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন। গ্রীষ্মের মৌসুমে কাঁঠাল বিক্রি শুরু হয়েছে। এ বিক্রি চলবে সামনের বর্ষা মৌসুমের শেষ পর্যন্ত। তার দাবি, এখানকার কাঁঠালের কদর রয়েছে চট্টগ্রাম কুমিল্লাসহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে। মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী জানান, কাঁঠাল পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে রয়েছে অধিক পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও বিভিন্ন ভিটামিন যা মানবদেহের জন্য অতি প্রয়োজন। কাঁচা কাঁঠাল রোগব্যাধি উপশমে যেমন কার্যকর, অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয় অনেকগুণ। কাঁঠালে আছে শক্তিশালী এন্টি-অক্সিডেন্ট, যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলস থেকে রক্ষা করে।