নজরুল সাহিত্য ও নজরুলসংগীতে অনন্য সাধারণ অবদানের জন্য প্রতি বছর একবার করে পৃথক দুই ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে নজরুল জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘নজরুল পুরস্কার’ প্রদান করার বিষয়ে পুরস্কারের নীতিমালায় উল্লেখ থাকলেও নজরুল গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত না করে শুধু ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করার অভিযোগ রয়েছে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটটির বিরুদ্ধে। কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য, সংগীত ও অন্যান্য ক্ষেত্রে গবেষণা, প্রকাশনা, প্রচারণা, সংকলন, সংরক্ষণ, স্বীকৃতিসহ নানাবিধ কাজের জন্য ঢাকার ধানমন্ডির দপ্তর কবি ভবনে ১৯৮৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় কবি নজরুল ইনস্টিটিটিউট। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নজরুলসংগীত, সাহিত্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পদক ও পুরস্কার প্রদান করে আসছে। ১৯৮৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫১ জন গুণী ব্যক্তিত্বকে এ পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে। শুরুতে এর নাম ছিল নজরুল-স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৯৮ সাল থেকে নজরুল পদক ও ২০০৭ সাল থেকে ‘নজরুল পুরস্কার’ নামে এ পদক প্রদান করা হয়ে আসছে। নতুন নীতিমালার অধীনে সর্বশেষ গত ৩০ মে প্রদান করা হয় ২০২১ ও ২০২২ সালের পুরস্কার। ২০২১ সালে নজরুল গবেষণায় ড. কাজী মোজাম্মেল হোসেন, নজরুলসংগীতে শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারী এবং ২০২২ সালে নজরুল গবেষণায় মো. ইদরিস আলী এবং নজরুলসংগীতে শিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদকে নজরুল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ নীতিমালায় পুরস্কার প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানও সংযুক্ত করা হলেও নজরুলকে নিয়ে গবেষণা কার্যক্রমে পরিচালনা করে এমন প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত না করে শুধু ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করার অভিযোগ রয়েছে ইনস্টিটিউটটির বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এএফএম হায়াতুল্লাহ প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনেকেই কাজ করছেন, এটা সত্য। তবে তাদের প্রস্তাবনাগুলো আসতে হবে। আপনি নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন; কিন্তু অ্যাপ্লাই না করলে পাবেন না।’ প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক যতীন সরকার বলেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার। এরকমটি কোনোভাবেই হওয়া উচিত নয়।’
সরেজমিন দেখা যায়, নজরুল সাহিত্য ও নজরুলসংগীত নিয়ে নজরুল একাডেমি, বাংলা একাডেমি কিংবা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল গবেষণা কেন্দ্র ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল গবেষণা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে। এমনি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে বাধ্যতামূলক নজরুলের ওপর একটি কোর্স। আর ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়া ইনস্টিটিউটটি নজরুলের স্মৃতি রক্ষা, তার জীবন, সাহিত্য, সংগীত এবং সামগ্রিক অবদান সম্পর্কে পাঠদান, গবেষণা পরিচালনা, রচনাবলি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রকাশনা ও প্রচারে কাজ করে যাচ্ছে। যেখানে সর্বশেষ তিন অর্থবছরে গবেষণা প্রকল্পের জন্য অনুদান প্রদান করেছে ৮২টি। এরই মধ্যে দশটি গ্রন্থ ও জার্নাল প্রকাশ করেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আনোয়ার সাঈদ জানান, ব্যক্তির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানকেও স্বীকৃতি প্রদান করলে, সেক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যে নজরুল চর্চা হচ্ছে, সে সম্পর্কে দেশের মানুষ বিশদভাবে জানতে পারবে। আমাদের যেসব রাষ্ট্রীয় পদক রয়েছে, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, সেগুলোতেও প্রতিষ্ঠানকে বিবেচনাধীন ধরা হয়। আমি মনে করি ব্যক্তি পর্যায়ের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক নজরুল চর্চা প্রকাশ্যে আনা উচিত। নতুন নীতিমালায় প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত হলেও প্রতিষ্ঠান না পাওয়ার বিষয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমেদ জানান, এটাতো সম্পূর্ণ ট্রাস্টি বোর্ডের কাজ। নীতিমালা অনুসারে ট্রাসটি বোর্ডই যাবতীয় কার্যাদি করে, এখানে আমাদের মন্ত্রণালয়ের ইনভলমেন্ট নাই, আমাদের শুধু জানিয়ে দেয়। প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার প্রাপ্তি গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, অবশ্যই প্রতিষ্ঠানেরও নজরুল পুরস্কার পাওয়া উচিত, ব্যক্তিও পাওয়া উচিত। প্রতিষ্ঠান পেলে পদকের গুরুত্বও বাড়ে।