ঢাকা ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রাজাপালং ইউপি উপনির্বাচন-২০২৪

প্রভাষক হুমায়ুনের মনোনয়নপত্র রহস্যজনক কারণে বৈধ!

প্রভাষক হুমায়ুনের মনোনয়নপত্র রহস্যজনক কারণে বৈধ!

কক্সবাজারের উখিয়ায় রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ উপনির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রভাবশালী একপ্রার্থীর মনোনয়ন-প্রার্থিতার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। সরকারি কলেজে চাকরিতে বহাল থেকে রহস্যজনক কারণে নির্বাচনে প্রার্থিতা জন্য মনোনয়ন ফরম জমা ও মনোনয়ন বৈধতা পেয়েছেন অধ্যাপক হুমায়ুন কবির চৌধুরি। মনোনয়ন যাচাই-বাছাইকালে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে হতাশ হয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বী উপর ৩ প্রার্থী।

তফসিল অনুযায়ী গত শুক্রবার মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের শেষ দিন ছিল। ওই দিন মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইকালে হুমায়ুন কবির চৌধুরীর মনোনয়নের বৈধতা ঘোষণা নিয়ে প্রবল আপত্তি তুলেন উপস্থিত অন্যান্য প্রার্থীরা। নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৫ জন প্রার্থীর মনোনয়ন ফরম যাচাই-বাছাই শেষে সবাইকে বৈধ প্রার্থী হিসাবে তালিকা প্রকাশ করেছেন উখিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ উপ-নির্বাচন-২০২৪-এর রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।

বৈধ প্রার্থীরা হলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহিন আক্তার ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির কবির চৌধুরীর বড় ভাই হুমায়ুন কবির চৌধুরি, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের টানা ৪ বারের চেয়ারম্যান শাহ কামাল চৌধুরি বড় পুত্র সাদমান জামী চৌধুরি, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও উখিয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ ফরিদুল আলম, উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মকবুল হোসাইন মিথুন ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক চৌধুরী। এবারের নির্বাচনে দলীয় কোনো প্রতীক না থাকায় সবাইকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

রিটার্নিং অফিসার ৫ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধতা দিলেও হুমায়ুন কবির চৌধুরীর মনোনয়ন বৈধতা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন অপর প্রার্থী সাদমান জামী চৌধুরীর ব্যক্তিগত আইনজীবী ব্যারিস্টার সাফফাত ফারদিন রামীম। তিনি জানান, স্থানীয় সরকার আইন, ২০০৯ এর ২৬(২)(ঙ) ধারা অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত বা বহাল থাকার পর কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে না। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৫৩ ধারা অনুযায়ী পদত্যাগ করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্দিষ্ট শর্তে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তির পর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিধান রয়েছে। বাছাইয়ের সময় হুমায়ুন কবির চৌধুরী নিয়োগদানকারী কর্তৃপক্ষ তথা মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে মন্ত্রণালয় কর্তৃক উনার পদত্যাগের আবেদন নিষ্পত্তির কোনো প্রজ্ঞাপন দেখাতে পারেনি তাই আইনজীবীরা।

ব্যারিস্টার সাফফাত ফারদিন রামিম আরো বলেছেন, অনুরূপ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে তার পদত্যাগপত্র নিষ্পত্তি না করে সরকারি চাকরিতে বহাল থেকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় সরকার আইন-২০০৯-এর ২৬ (ঙ) ধারায় অযোগ্য হওয়ার পরেও তাকে বৈধপ্রার্থী হিসাবে তালিকা প্রকাশ করা মোটেও আইনসিদ্ধ হয়নি।

প্রার্থী সাদমান জামী চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, সরকারি গেজেটভুক্ত সরকারি কলেজের অধ্যাপনা করে অধ্যাপক হুমায়ুন কবির মন্টুর প্রার্থিতা বৈধতা ঘোষণা নিয়ে আমরা অবাক হয়েছি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের পক্ষ থেকে জোর আপত্তি তোলার পরও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তা রহস্যজনক কারণে এড়িয়ে যায়।

অপর প্রার্থী ফরিদুল আলম অনুরূপভাবে তার বিষয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় পদত্যাগ না করে ইউপি নির্বাচনে হুমায়ুন কবির চৌধুরী প্রার্থী হওয়া কতটুকু বৈধতা পায় তা ভাবিয়ে তুলেছে। প্রার্থী হুমায়ুন কবির চৌধুরীর ব্যক্তিগত আইনজীবী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট দুলাল মল্লিক জানান, সংশ্লিষ্ট কলেজ অধ্যক্ষ কে যথাযথ প্রক্রিয়া পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে অধ্যাপক হুমায়ুন প্রার্থী হয়েছেন। তাই তার প্রার্থিতা বৈধতা পেতে কোনো বাধা ছিল না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতির আদেশ ক্রমে বিগত ১৬-০৮-২০২৩ ইং তারিখে বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ শাখা বাংলাদেশ সচিবালয় ঢাকার উপসচিব তানজিলা খানম স্বাক্ষরিত স্মারক নং-৩৭,০০,০০০০,০৮৫,১৫,১৩৪ (এ) ২২-১২০৫ নং মূলে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে প্রভাষক পদে সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা বিধি-৫ এবং বিধি-৬ এ বর্ণিত বিধান মোতাবেক সরকারিকরণের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৮ হতে অধ্যাপক হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উখিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ উপনির্বাচন-২০২৪ এর রিটানিং অফিসার মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেছেন, অধ্যাপক হুমায়ুন কবির চৌধুরীর প্রার্থিতা বিষয়ে অভিযোগ থাকলে আগামী ৩ দিনের মধ্যে জেলা নির্বাচন অফিসার বরাবর আপিল করার সুযোগ রয়েছে। হুমায়ুন কবির চৌধুরী প্রার্থিতা বৈধতা ঘোষণা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সচেতন মহলের মধ্যে। তাদের মতে শুরু যেখানে অনিয়ম দিয়ে, সেখানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও বজায় রেখে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের উপনির্বাচনে প্রার্থী জনাব হুমায়ুন কবির চৌধুরী কক্সবাজার জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য এবং সেই সঙ্গে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেসা মুজিব সরকারি মহিলা কলেজের ইসলামি ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সরকারি কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৫ ও ৬ এর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক রাজস্ব খাতে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষক।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত