সংবাদ প্রকাশের পর অবশেষে বগুড়ার শেরপুরে ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সেই আঞ্চলিক সড়ক থেকে ‘তিন নম্বর’ ইটের খোয়া অপসারণ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ভালো মানের খোয়াসহ নির্মাণ সামগ্রী ফেলার কাজও শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। ফলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকাবাসীসহ সড়কটিতে চলাচলকারী সাধারণ মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেন। এর আগে গত ২৫ জুলাই একাধিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সড়কটির নিম্নমানের কাজ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। টনক নড়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। সেইসঙ্গে উপজেলার সেরুয়া বাজার থেকে ব্র্যাক বটতলা হয়ে ভবানীপুর পর্যন্ত বারো কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়কটি সরেজমিন পরিদর্শন করে নিম্নমানের খোয়া অপসারণের নির্দেশ এলজিইডির কর্মকর্তারা। এছাড়া স্থানীয় সরকার দলীয় জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মজিবর রহমান মজনুও আঞ্চলিক সকড়টি পরিদর্শন করেন। তিনি সড়ক বর্ধিতকরণ ও সংস্কার কাজের শুরুতেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে দ্রুত নিম্নমানের ইটের খোয়া অপসারণ করে উন্নতমানের খোয়াসহ নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে এলজিইডির কর্মকর্তাদের সড়ক সংস্কার কাজটি সঠিকভাবে দেখভাল করতে বলেন। এ সময় শেরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজামাল সিরাজী, ইউএনও মো. সুমন জিহাদী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ, মাহমুদুল হাসানসহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বরেন্দ্র এন্টারপ্রাইজের কর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ওই নির্দেশনা জারির দুই ঘণ্টা যেতে না যেতেই সড়কটি থেকে তিন নম্বর ইটের খোয়া অপসারণ করে ভালো মানের ইটের খোয়াসহ নির্মাণ সামগ্রী ফেলার কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদার। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সড়কটির ব্র্যাক বটতলা হয়ে ভাদড়া পর্যন্ত অংশে ফেলা তিন নম্বর ইটের খোয়া সরিয়ে ফেলতে শ্রমিকরা কাজ করছেন। পাশাপাশি ভালো মানের বালু মিশ্রিত খোয়া ড্রাম ট্রাকে ভরে এনে ওই অংশ ফেলছেন তারা। এ সময় কথা হয় ঠিকাদার সুমন মিয়া ও তার ব্যবস্থাপক সবুজ মিয়ার সঙ্গে।
তারা বলেন, বিগত ৭ মে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে এই সড়ক বর্ধিতকরণ ও সংস্কার কাজ করছেন। কিন্তু সড়কে ফেলা কিছু অংশে ইটের খোয়ার মান নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। তবে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগটি সঠিক নয়। কারণ ওই সড়কের পুরোনো ইট ভেঙে খোয়া করা হয়েছিল। এরপরও অভিযোগ ওঠায় ওইসব খোয়া সরিয়ে নতুন এক নম্বর ইটের খোয়া ফেলছেন বলে দাবি করেন তারা।
সড়কে ফেলা ইটের খোয়াগুলো দেখে স্থানীয় বাসিন্দা সোলায়মান আলী, বাদশা মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, এখন কাজের মান সন্তোষজনক বলা যায়। এভাবে কাজ হলে সড়কটির স্থায়িত্ব দীর্ঘ হবে। ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি আবারো সরেজমিন গিয়ে পরিদর্শন করেছি। এখন যেসব খোয়া ফেলা হচ্ছে তার গুণগতমান খুবই ভালো।
উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ বলেন, ১২ কিলোমিটার ওই আঞ্চলিক সড়ক বর্ধিতকরণ ও সংস্কার কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। কাজের শুরুতেই ইটের খোয়ার মান নিয়ে অভিযোগ ওঠায় গতকাল সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। সড়কের কিছু অংশে ফেলা ইটের খোয়া মান একটু খারাপ মনে হয়েছে। তাই সেগুলো সরিয়ে উন্নতমানের ইটের খোয়া ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। মানহীন খোয়া দিয়ে সড়ক পাকাকরণ ও সংস্কার কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। এটি করা না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে নির্দেশ দেওয়ার দুই ঘণ্টা যেতে না যেতেই সড়কের চিহ্নিত অংশ থেকে নিম্নমানের ইটের খোয়া অপসারণ করে ভালো মানের খোয়া ফেলার কাজ ঠিকাদারের লোকজন শুরু করেছে বলে দাবি করেন তিনি।