বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কৌশলগত সহযোগিতা আরো এগিয়ে নিতে চায় বাংলাদেশ ও চীন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরেও আলোচনায় এসেছে এ খাতে চীনের বিনিয়োগের বিষয়টি। শুধু সরকারি খাত নয়, বেসরকারি খাতেও বাড়ছে সহযোগিতার সম্ভাবনা। ভোলার গ্যাস সিএনজি আকারে ঢাকায় পরিবহন বাড়াতে দুই দেশের দুটি বেসরকারি খাতের মধ্যে সমঝোতা সই হয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই। এছাড়া, বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত, বিদ্যুৎ সঞ্চালন অবকাঠামোর উন্নয়ন ও মহেশখালী থেকে এলএনজি পাইপলাইন নির্মাণেও বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে চীন। বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ চীন। সারা বিশ্বে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৩০ শতাংশই অর্থনৈতিক পরাশক্তি এ দেশটির দখলে। নির্ভরযোগ্য সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে যা পৌঁছে যাচ্ছে গ্রাহকের ঘরে ঘরে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও অন্যতম সহযোগী চীন। পায়রায় দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র, সঞ্চালন-বিতরণ অবকাঠামোর উন্নয়ন কিংবা গ্যাস অনুসন্ধানসহ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় অংকের বিনিয়োগ আছে চীনের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের বেইজিং সফরেও গুরুত্বে ছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। আর এ সফরে সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই চীনের নতুন বিনিয়োগ আসার ক্ষেত্র তৈরি হলো বলে মনে করেন নীতিনির্ধারকরা।
প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই সই হয় বেসরকারি খাতের মধ্যে জ্বালানি খাতবিষয়ক কিছু সমঝোতা। ভোলার গ্যাস ঢাকায় আনার হার বাড়াতে চীনের শিঝুয়াং এনরিক গ্যাস ইকুইপমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে ২০ মিলিয়ন ডলারের সমঝোতা করে বাংলাদেশের ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং। এছাড়া, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত এবং সিলেটে সোলার পার্ক নির্মাণে চীনের হেশেং সিলিকন ইন্ডাস্ট্রি ও নিংবো সান ইস্ট সোলার কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা হয় বিলিয়ন টেন কমিউনিকেশনের।
ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াদ আলী সময় সংবাদকে বলেন, জাহাজে করে গ্যাস ঢুকবে এবং পাওয়ার প্ল্যান্টে তা নেয়া হবে। এ কাজ শুরু হবে আগামী বছর। প্রধানমন্ত্রীর সফরে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ঘোষণাপত্রে ছিল গভীর সমুদ্র থেকে জ্বালানি তেল খালাসে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্পের কমিশনিং সম্পন্নের বিষয়টি। এছাড়া, বিদ্যুৎ সঞ্চালন অবকাঠামোর আধুনিকায়ন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সহযোগিতার বিষয়েও আগ্রহী দুদেশ।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা চলছে। সোলারে তারা বড় আকারে বিনিয়োগ করবে। এছাড়া, অনেক প্রকল্পেই তারা অর্থ সহযোগিতা করতে চাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে বিষয়গুলো উঠে এসেছে। এছাড়া, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এলএনজি টার্মিনালের গ্যাস সঞ্চালনে মহেশখালী থেকে পাইপলাইন তৈরির বিষয়েও দরকষাকষি চলছে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে। ২০৩০ সালের মধ্যে সিস্টেমটাকে স্টেবল করার জন্য এ পাইপলাইনটা জরুরি। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এটা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটা চীন থেকে করা হোক বা অন্য কোনো জায়গা থেকে হোক। নীতিনির্ধারকদের আশা, আগামী দিনে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৪০ বিলিয়ন ডলারের যে বিনিয়োগ প্রয়োজন, তাতে অন্যতম সহযোগী হিসেবে থাকবে চীনও।