কিশোর ফাইয়াজের হাতে দড়ি বাঁধা আইনের ব্যত্যয় : রাষ্ট্রপক্ষ

প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতার মধ্যে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ হত্যার মামলায় গ্রেপ্তার কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে হাতে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করায় শিশু আইনের ব্যত্যয় হয়েছে বলে হাইকোর্টকে বলেছে রাষ্ট্রপক্ষ। গতকাল সোমবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের বেঞ্চে এ সংক্রান্ত একটি রিটের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ এ কথা জানায়। পরে আদালত রিটটি খারিজ করে দেয়। রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহদীন মালিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ।

শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ বলেন, ফাইয়াজকে বেঁধে আদালতে আনা শিশু আইনের ব্যত্যয় ছিল। রাষ্ট্রপক্ষ এ ভুল স্বীকার করে নেওয়ায় এ সংক্রান্ত রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দিয়েছেন কোর্ট। নিম্ন আদালত ১৭ বছর বয়সি কিশোর হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিলে তা চ্যালেঞ্জ করে রিট করা হয়। গতকাল সোমবার তা আদেশের জন্য রাখা হয়। ওইদিন বিকালে আবার নিম্ন আদালত তার রিমান্ড আদেশ বাতিল করে। জন্ম নিবন্ধন অনুসারে, হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজের জন্ম ২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল। ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ঢাকার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে পাস করেছে। রিমান্ড আবেদন থেকে জানা যায়, পুলিশের নায়েক গিয়াস উদ্দিন (৫৮) গণভবনে ডিউটি দিতে যাওয়ার জন্য ১৯ জুলাই রাত ৯টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়েছিলেন। সে সময় কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছিল। মোটরসাইকেলে করে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ ফুটব্রিজের উত্তর পাশে পৌঁছানো মাত্র তার ওপর হামলা হয়। এরপর তাকে হত্যা করে রশি দিয়ে ফুটব্রিজের সঙ্গে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়। ওই ঘটনায় ২৪ জুলাই গিয়াস উদ্দিনের ভগ্নিপতি মো. ফজল প্রধান যাত্রাবাড়ী থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতানামা অনেককে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এরপর ২৪ জুলাই রাতে সাধারণ পোশাকের একদল লোক ফাইয়াজকে তাদের মাতুয়াইলের বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে নিয়ে যায় বলে তার পরিবারের ভাষ্য। শনিবার এ মামলায় ডেমরা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুদ রানা ও ফাইয়াজসহ সাতজনকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয় আদালত। ওই সাতজনের মধ্যে ফাইয়াজের বয়স ১৮ হয়নি বলে তার আইনজীবীর ভাষ্য। ফাইয়াজের আইনজীবী মো. মুজাহিদুল ইসলাম শনিবার আদালতে রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিন চেয়েছিলেন। ফাইয়াজকে ‘শিশু’ দাবি করে রিমান্ডে না পাঠানোর আর্জি জানিয়েছিলেন। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম শান্তা আক্তার জামিন নাকচ করে ফাইয়াজকেও রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন। ফাইয়াজকে ‘রিমান্ডে নেওয়ার’ বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট হলে গত রোববার তার শুনানি হয় বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে জানায়, ফাইয়াজকে রিমান্ডে নেওয়া হবে না। পরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরসেদ বলেছিলেন, ‘ফাইয়াজকে রিমান্ডে নেয়া হবে না। এ ব্যাপারে শিশু আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ গত রোববার বিকালে কার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক রোকসানা বেগম হ্যাপীর আদালত ফাইয়াজকে শিশু হিসেবে ঘোষণা করে তার রিমান্ডের আদেশ বাতিল এবং গাজীপুরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেয়। হাইকোর্টের বিষয়টিও নিম্ন আদালতের নজরে আসে জানিয়ে ফাইয়াজের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম বলেছিলেন, আমরা শিশু আদালতে শিশু আইন-২০১৩ এর ২১ ধারা অনুযায়ী ফাইয়াজকে শিশু ঘোষণা করে শিশু আইনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের আবেদন করি।