শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি নিয়ে রিটের শুনানিতে যা হলো

প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি না করার নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানিতে রিটকারী পক্ষ, রাষ্ট্রপক্ষ ও আদালতের মধ্যে অনেক কথোপকথন হয়েছে। দেশের বিরাজমান অবস্থায় আন্দোলনকারী, সরকার, পুলিশ, ডিবি পুলিশের ভূমিকার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। শুনানিতে রিটকারীদের পক্ষে ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, পুলিশকে যদি গুলি চালাতেই হয়, তবে পায়ের দিকে লক্ষ্য করে গুলি করতে হবে। রাতের বেলায় কেউ ডাকাতি করতে গেলে আত্মরক্ষার্থে সরাসরি গুলি করতে পারবে।

আদালত বলেন, এমন কোনো কাজ করব না যাতে জাতির ক্ষতি হয়। সমস্ত মৃত্যুর ঘটনায় আমরা লজ্জিত। অনীক আর হক বলেন, জাতির ক্ষতি বলতে শুধু কিছু ভবন, স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি বোঝালে হবে না, জীবনের ক্ষতিও জাতির ক্ষতি। আগে বিক্ষোভ দমন বা ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ গরম পানি, মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করত। আদালত তখন বলেন, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ব্যবহার করা যেতে পারে। তার আগে মাইকিং করে সতর্ক করতে হবে। আদালত এক পর্যায়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কেউই সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছি না। পুলিশ কখন আর্মি কল করতে পারে সেটিও আইনে বলা আছে। পুলিশকে যে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল তার খবর ও ছবি খুব একটা প্রচারে আসেনি। রিটকারীদের আরেক আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, ছয় সমন্বয়ককে যে হেফাজতে রাখা হয়েছে, এটা তো স্বীকৃত। আইন কর্তৃত্ববহির্ভূতভাবে কাউকে এভাবে হেফাজতে রাখার সুযোগ নেই। আইনি ক্ষমতার বাইরে কোনো পদক্ষেপ নেয়া যায় না। বলা হচ্ছে, তাদের আত্মীয়-স্বজনরা দেখা করতে পারছে। কিন্তু তারা (ছয় সমন্বয়ক) কার সঙ্গে দেখা করতে চায় বা চায় না সেটা জানার কোনো সুযোগ নেই। তার মানে একটি নিয়ন্ত্রণ চলছে।

আদালত বলেন, প্রসেসের ভেতরে আটকাতে হবে। হয় নিমান্ডে নেন নয় কোর্টে তুলুন।

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এসএম মুনীর বলেন, একটা লোকের জীবন হুমকিতে আছে, তাকে মেরে ফেলবে। আদালত বলেন, তাকে যে মেরে ফেলবে সে কথাটা তাকেই বলতে হবে। সে তো আশ্রয় চায়নি। অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, রিট আবেদনকারীরা ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষার জন্য এসেছেন। তারা একটি গণতদন্ত কমিশন গঠন করেছেন। এখানে যারা এসেছেন তারা সবাই এই কমিশনের সদস্য। তাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে। কমিশনের চেয়ারম্যান একজন আবেদনকারীর বাবা। জাতিসংঘের একটি চার্টার উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এতে স্বাক্ষর করেছে। ওই চার্টার অনুসারে অনুপেক্ষিত ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারীরা গুলি চালাতে পারবে। কোনটা অনুপেক্ষিত পরিস্থিতি, সে সিদ্ধান্তও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেই নিতে হবে। এটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।

এরপর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ বলেন, আমরা কোর্টের ভেতরে আছি। আইনের মধ্য থেকে কথা বলব। এমন কিছু বলব না যাতে কেবল মিডিয়া কাভারেজ পাওয়া যায়। আদালত তখন বলেন, বিষয়টি সব পক্ষেরই খেয়াল রাখা দরকার। এখন দেশে যে অবস্থা সে পরিস্থিতিতে ছয় সমন্বয়ককে পুলিশ আটক রাখতে পারে কি না। তখন আইন কর্মকর্তা মোরশেদ বলেন, দেশে এখন যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাকে কীভাবে রাখবে সে সিদ্ধান্ত তাদেরই নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, কোটা নিয়ে আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছেন, সেখানে সর্বোচ্চ আদালত কিছু পর্যবেক্ষণও দিয়েছেন। আদালত আশা প্রকাশ করেছেন, যে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে সে কমিশন প্রত্যেকটি মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত হবে। তা সত্ত্বেও তারা গণতদন্ত কমিশন গঠন করেছে। সভা-সমাবেশের অধিকার নিয়ে এ আইন কর্মকর্তা বলেন, আইনি বিধি-নিষেধসাপেক্ষে সভা-সমাবেশের অধিকার দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে বল প্রয়োগ করেছে, তার কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই। সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শুরুতে এই আন্দোলন অহিংস থাকলেও এক পর্যায়ে তা ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নেয়। এরপর আন্দোলন দমাতে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছোড়ে পুলিশ। পুলিশের গুলিতে রংপুরের আবু সাঈদসহ বেশ কিছু শিক্ষার্থী নিহত হন। পুলিশের গুলি থেকে বাদ যায়নি শিশুরাও। এমন বাস্তবতায় আদালতে রিট করা হলে সেই রিটের শুনানি করা হয় দুই দিন। আগামীকাল বুধবার এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।