ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

হামাস নেতা হানিয়া হত্যায় বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

হামাস নেতা হানিয়া হত্যায় বিশ্ব প্রতিক্রিয়া

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া ইরানের রাজধানী তেহরানে নিহত হওয়ার পর হামাসের সশস্ত্র শাখা এর প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। এ হত্যাকাণ্ডের কঠোর জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইরানও। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই হত্যার ঘটনা নিয়ে কি বলছে তা তুলে ধরেছে- আল-জাজিরা:

হামাস : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই সংগঠনটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সামি আবু হামলার ঘটনার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে বলেছেন, ‘এই দখলদ্বার বাহিনীর হাতে ভাই হানিয়া হত্যাকাণ্ড মারাত্মক বাড়াবাড়ি। হামাসের মনোবল এবং আমাদের জনগণের মনোবল ভেঙে দিয়ে ভুয়া লক্ষ্য অর্জন করাই এর উদ্দেশ্য। আমরা নিশ্চিত করে বলছি এই বাড়াবাড়ি কোনও কাজে আসবে না, লক্ষ্যও পূরণ হবে না। হামাস একটি ধারণা, একটি প্রতিষ্ঠান। এটি কোনো ব্যক্তি নয়। তারা এই পথেই চলবে। তাতে যত ত্যাগ-তিতীক্ষাই থাকুক না কেন। আমরা জয় পাওয়ার ব্যাপারে আস্থাশীল।

ইসরায়েল : ইরায়েলের ঐতিহ্যবিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন, ‘বিশ্বকে ময়লামুক্ত করার এটিই সঠিক পথ। আর কোনো মনগড়া শান্তি-আত্মসমর্পণ চুক্তি নয়। আর কোনো দয়া নয়। লৌহমুষ্ঠিতে তাদের আঘাত করাই শান্তি বয়ে আনবে, কিছুটা হলেও স্বস্তি আনবে। যারা শান্তির আকাঙ্ক্ষা করে তাদের সঙ্গে আমাদের শান্তিতে বসবাসের সক্ষমতা বাড়বে। হানিয়ার মৃত্যু বিশ্বকে আরেকটু ভালো অবস্থানে নিয়ে গেছে।’

ইরান : দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিজেদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সম্মান, গৌরব, মর্যাদা রক্ষা করবে এবং সন্ত্রাসী হামলাকারীদের তাদের কাপুরুষোচিত কর্মকাণ্ডের জন্য পস্তানোর ব্যবস্থা করবে। এই প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়েই হানিয়া নিহত হন। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এক বিবৃতিতে হানিয়ার ওপর হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে বলেছেন, ‘অপরাধী এবং সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠী আমাদের অতিথিকে আমাদের বাড়িতে হত্যা করে আমাদের মর্মাহত করেছে। কিন্তু তারা এ কাজ করে নিজেদের জন্যও কঠোর সাজা পাওয়ার পট প্রস্তুত করেছে।’

লেবাননের হিজবুল্লাহ : হামাস ও ইরান-সমর্থিত সশস্ত্রগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে বলেছে, মহান এই নেতাকে (হানিয়া) হারিয়ে হামাসে আমাদের প্রিয় ভাইরা যে বেদনা ভোগ করছে, শত্রুর প্রতি যে ক্রোধ অনুভব করছে, তার সঙ্গে আমরাও একাত্মতা প্রকাশ করছি। সেইসঙ্গে আমাদের আন্দোলনের নেতারা তাদের জনগণের নেতৃত্ব দেওয়া এবং মুজাহিদিনদের শহীদানের যে ত্যাগ স্বীকার করছেন তাতে গর্বও অনুভব করছি।

ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ : ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যার তীব্র নিন্দা করে একে ‘কাপুরুষোচিত কাজ ও বিপজ্জনক তৎপরতা’ বলে মন্তব্য করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি ফিলিস্তিনিদের ‘ধৈর্য ধরার ও ঐক্যবদ্ধ থাকার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

অস্ট্রেলিয়া : দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস বলেছেন, এই ব্যক্তি (হানিয়া) গত বছর ৭ অক্টোবরের হামলার ঘটনার মূলে ছিল। সেই ঘটনা যার নিন্দা আমরা অনবরতই জানিয়ে এসেছি।’ আমরা অবিরাম মধ্যপ্রাচ্যে চলমান বিপর্যয়ের অবসানে যুদ্ধবিরতির জন্যও বরাবরই কথা বলে এসেছি। আমরা এটাই নিশ্চিত করে বলতে চাই যে এখানে আমরা বাড়াবাড়ি কিছু দেখছি না। কারণ, ওইসব ঘটনার পরিণতি এমন গূঢ়ই হতে পারে।

চীন : দেশটি ইসমাইল হানিয়া হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেছেন,‘আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাই এবং দৃঢ়ভাবে এ হত্যাকাণ্ডের বিরোধিতা করছি। গাজায় যত দ্রুত সম্ভব একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অর্জিত হওয়া উচিত।’

মালয়েশিয়া : দেশটি ইসমাইল হানিয়া হত্যার ঘটনার দ্রুত ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা এবং এর জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে। হত্যাকাণ্ড ঘিরে সত্য ঘটনাটি যতক্ষণ সামনে না আসছে ততক্ষণ পর্যন্ত সব পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বানও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়।

কাতার : দেশটি অত্যন্ত কড়া ভাষায় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া হত্যার নিন্দা জানিয়েছে। তারা একে জঘন্য অপরাধ, বিপজ্জনক তৎপরতা এবং আন্তর্জাতিক ও মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে বর্ণনা করেছে। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই হত্যাকাণ্ড এবং গাজায় বেসামরিক মানুষদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বেপরোয়া আচরণ এ অঞ্চলকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেবে এবং শান্তির সম্ভাবনা নস্যাৎ করবে।

রাশিয়া : দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানভ বলেছেন, ‘এটি একটি রাজনৈতিক খুন। এমন খুন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘটনা উত্তেজনা আরো বাড়াবে।’

তুরস্ক : তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, হানিয়া হত্যা আরো একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো অভিপ্রায় নেই। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলকে থামাতে ব্যবস্থা না নিলে এই অঞ্চল আরো বড় ধরনের সংঘাতের মুখোমুখি হবে।

ইয়েমেনের হুতি : দেশটির হুতি গোষ্ঠীর সুপ্রিম রেভল্যুশনারি কমিটির প্রধান মোহাম্মদ আলি আল-হুতি বলেছেন, ‘ইসমাইল হানিয়েকে হত্যার নিশানা করা একটি জঘন্য সন্ত্রাসী অপরাধ এবং আইন ও আদর্শগত মূল্যবোধের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।”

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত