কক্সবাজারে মালখানা ভবনের দেওয়াল ফুটো করে শৃঙ্খলা বাহিনীর জব্দকৃত অস্ত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল চুরির চেষ্টার ঘটনা দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনো ধরা পড়েনি মূল অপরাধী। কক্সবাজার শহরের ডিসি ও কোর্টসংলগ্ন মালখানার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় চুরির চেষ্টার ঘটনা সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন মহল। যদিও ঘটনার পরপর সন্দেহভাজন পাঁচজন আটক করে পুলিশ। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। এই ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে মালখানার দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক আনিসুর রহমানকে রাঙামাটি বদলি করা হয়েছে। অন্যদিকে এ ঘটনায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মো. শাকিল আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) অলক বিশ্বাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান। মামলার বাদী ও কক্সবাজার সদর কোর্টের মালখানার অতিরিক্ত দায়িত্বশীল উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম হোসাইন তার এজাহারে দাবি করেন, গত ৩ জুলাই কোর্টের যাবতীয় কাজ সেরে কোর্ট পুলিশের পরিদর্শকে অবগত করে তালা লাগিয়ে চলে যায়। পর দিন মালখানার সিলগালা ও চাবি দিয়ে তালা খোলার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ছাদের লিন্টারের নিচে দেওয়াল ভাঙা পায়। বিষয়টি তৎক্ষণিক কোর্ট পুলিশ পরিদর্শকে অবগত করা হলে ভেতরে পরিদর্শন করেন এবং ভাঙা স্থান থেকে একটি লোহার কোরাবানি, দুইটি হেসকো ব্লেড ও দুই জোড়া কেডস জুতা উদ্ধার করা হয়। ওই সময় সিনিয়র কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এজাহারের ভাষ্যমতে, কোর্ট মালখানায় ২৭ হাজার ৫৩২টি সিএমআর এ নগদ, স্বর্ণালংকার, অস্ত্র, গুলি, ইয়াবা, গাঁজাসহ অসংখ্য আলামত রয়েছে। তবে কি আলামত চুরি হয়েছে, তা নির্ণয় করা যায়নি বলে উল্লেখ করেন মামলার বাদী।
মামলার বাদী ও কক্সবাজার সদর কোর্টের মালখানার অতিরিক্ত দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম হোসাইন বলেন, আমি শুধু চুরির চেষ্টার অপরাধে অজ্ঞাত এজাহার দিয়েছি। বিষয়টি সদর মডেল থানার একজন কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। তিনি দাবি করেন, মালখানা থেকে কোনো মাল খোয়া যায়নি। যোগাযোগ করা হলে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা, কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুস সাত্তার জানান, এঘটনায় এপর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতে প্রত্যেকের পাঁচদিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়। দুই করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। তার প্রেক্ষিতে পৃথকভাবে দুই দিন করে রিমান্ডেও আনা হয়েছে তাদের।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, নানাভাবে চেষ্টা করেও রিমান্ডে তারা এই ঘটনার ব্যাপারে মুখ খুলেনি। তবুও এই ঘটনায় কারা জড়িত তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তারকৃতরা কক্সবাজারের চিহ্নিত অপরাধী। তাদের বিরুদ্ধে আগেরও মামলা রয়েছে।
তদন্তকালে মালখানার কোনো মালামাল খোয়া গেছে কিন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত এই ধরনের তথ্য মিলেনি। বিষয়টি তদন্ত চলমান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই ঘটনায় পশ্চিম নতুন বাহারছড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে গিয়াস উদ্দিন প্রকাশ নাগু (২৪), চৌফলন্ডী এলাকার মৃত আব্দুস শুক্কুরের ছেলে রাইতুল্লাহ (২২), ভারুখালী এলাকার আইয়ুব আলীর ছেলে মো. আলম মিয়া (২১), ঈদগাহ মাছুয়াখালী এলাকার মৃত কবির আহমেদ এর ছেলে মো. রায়হান ও সমিতিপাড়া এলাকার সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা কারাগারে রয়েছে। পুলিশের তথ্য মতে, গ্রেপ্তাররা সবাই কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানের বাসিন্দা হলেও তারা সবাই শহরের সমিতিপাড়া এলাকায় ভাড়াবাসা নিয়ে বসবাস করে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রেপ্তাররা কক্সবাজার শহরের চিহ্নিত অপরাধী।
মালখানায় তৎকালীন দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক আনিসুর রহমানের সঙ্গে গতকাল যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি কর্মস্থলে ছিলাম না। তবে কোনো মালামাল খোয়া যায়নি। ৬-১০ ইঞ্চি ফুটো দিয়ে তো কেউ ডুকতে পারবে?
এক পর্যায়ে জবাবে তিনি আরো বলেন, তবুও রক্ষিত মালামালগুলো গণনা করা হয়েছে। এখনো নতুন কাউকে দায়িত্ব দেয়নি। দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারলে আমি চলে যাব।
গতকাল তদন্ত কমিটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, মালখানা ভবনের দেওয়াল ফুটো করে শৃঙ্খলা বাহিনীর জব্দকৃত অস্ত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুটের পরিকল্পনা ছিল। তবে যেই পরিমাণ দেওয়াল ফুটো করা হয়েছে, তাতে কেউ প্রবেশ করতে পারেনি। তদন্তে তা প্রতীয়মান হয়েছে। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। গুরুত্বপূর্ণ সহকারে খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং এই কাজে জড়িত মূল অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি মালখানায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।