নারায়ণগঞ্জে নাশকতাকারীদের প্রতিহতে ঐকমত্য ছাত্র জনতার
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পরদিনই নারায়ণগঞ্জের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হক মতবিনিময় সভা করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলার সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রাখার লক্ষ্যে এই সভার আয়োজন করা হয়।
সভার শুরুতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সেই সঙ্গে তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল করা হয়। সভায় নাশকতাকারীদের প্রতিহতে ঐক্যমত ব্যক্ত করেন দলমত নির্বিশেষে সবার। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্থাপনা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়ের নিরাপত্তায় পাহারাও দিচ্ছেন বলে জানান নেতারা। আগামী দিনে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করারও মতবাদ ব্যক্ত করেন উপস্থিত সকলে।
সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, আজকে স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে। এত অন্যায় অত্যাচার খুন গুম করেছে এত লুটপাট করেছে পাপের ভার আল্লাহ সহ্য করতে পারে নাই। তাই এত ঘৃণ্যভাবে পতন হয়েছে। আমরা যারা নারায়ণগঞ্জে রাজনীতি করি সবাই দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ জনকল্যাণে একনিষ্ট। এই পরিস্থিতিতে জেলা আমাদের যে উদ্দেশ্য ডেকেছেন আমাদের করণীয় কি সেটা আমরা উপলব্দি করতে পারছি।
তিনি আরো বলেন, দেশের মুক্তিকামী মানুষের বিজয়ে প্রথমতো প্রশাসন তাদের চিন্তা চেতনার পরিবর্তন আনবে এটা আমি অনুভব করি। এই ১৬ বছর প্রশাসনে অনেক স্বাধীনচেতা ভালো কর্মকর্তা থাকার পরেও স্বৈরশাসকের কারণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন নাই। আজকে নতুনভাবে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আপনাদের মন মস্তিস্ক চিন্তা পরিবর্তন আনবেন এটা আমরা প্রত্যাশা করি। এই প্রশাসনের মাধ্যমেই দেশ পরিচালনা করতে হবে এটা আমরা বুঝি।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আমাদের লক্ষ্য হবে সরকারি সম্পত্তি আমাদের সবার। আমাদের অনেক রদবদল হবে কিন্তু এই প্রশাসন থাকবে। এই প্রশাসন দিয়ে আমাদের দেশ গঠন করতে হবে। সুতরাং সরকারি কোনো সম্পত্তিতে আঘাত করা যাবে না। আমরা প্রশাসনকে সহযোগিতা করবো। যারা বিভিন্ন অনিয়ম করে আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইবে আমাদের ছাত্র জনতার অর্জনকে নষ্ট করতে চাই সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জের সমন্বয়ক ফারহানা মানিক মুনা বলেন, একটি নিরাপদ নারায়ণগঞ্জ গড়ার জন্য ছাত্র জনতা কাজ করবে। আমরা প্রশাসন যেসব উদ্যোগ নিবে তাতে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব চাই। এই আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে কতজন নিহত হয়েছে এবং কতজন আহত হয়েছে তার সঠিক তালিকা তৈরির দাবি জানাচ্ছি। আমরা নারায়ণগঞ্জে কোন দখলদার, নৈরাজ্যকারী, সন্ত্রাসী তৈরি হোক সেটা চাইনা। এই আন্দোলন করতে গিয়ে সব গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। যারা অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়েছে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। অবিলম্বে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চাই। সব গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন বাস্তবায়ন করতে হবে। নারায়ণগঞ্জের ত্বকীকে হত্যাকারী গডফাদারদের বিচার করতে হবে। আমরা লড়াই করেছি আগামী দিনেও বুক চিতিয়ে লড়াই করবো। আমরা কিন্তু এখনো রাজপথ ছাড়ি নাই। নতুন নারায়ণগঞ্জ গড়তে আমরা এখনো রাজপথে আছি।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) আমির খসরু বলেন, আজকে জেলা প্রশাসক চমৎকার যে উদ্যোগটা নিয়েছেন সেটা সারাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে উদাহরণ হয়ে থাকবে। গত সোমবার নারায়ণগঞ্জে পুলিশ লাইনসহ বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা লুটপাট চালানো হয়েছে। পুলিশ লাইনে ৪-৫ হাজার লোক হামলা চালিয়েছিল। আমি ইসলামী আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মুফতী মাসুম বিল্লাহকে জানানোর পরে তিনি লোক পাঠিয়েছিলেন। তারা সারারাত পাহাড়া দিয়েছে। ফজরের পরে সেখান থেকে গিয়েছেন। একইভাবে বিএনপি, যুবদল, হেফাজতে ইসলামসহ সবাই আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন। তিনি আরো বলেন, আসলে আমরা ট্রমানাইজড। আমার ফ্যামিলি থেকে বলা হচ্ছে তুমি পুলিশের চাকরি ছেড়ে দাও। কিন্তু আমাকে তো কোথাও না কোথাও হাল ধরতে হবে। আমি তো চাকরি করতে এসেছি। আমার বন্ধুবর জেলা প্রশাসক বলেছেন আমাকে থাকতে। আমি নারায়ণগঞ্জ ত্যাগ করিনি। আমাদের সত্যকে মেনে নিতে হবে। ভুল থেকে শুধরাতে হবে। সাদাকে সাদা আর সত্যকে সত্য বলতে হবে। গতকাল যে ঘটনাটি ঘটলো এবং এই ক্রাইসিসে পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি করার জন্য দায়ী রাজনীতিকরাই। আমাদেরকে বিভিন্ন পলিসি দেয়া হয় বিভিন্ন আইন তৈরি করে দেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জে সিনিয়র হিসেবে আমি এই জেলা ছাড়িনি। কিন্তু ২২০০ পুলিশ ফোর্সের মধ্যে কে কোথায় আছে জেলায় কতজন আছে জেলার বাহিরে কতজন আছে বিশ্বাস করেন আমি কিন্তু জানি না। নারায়ণগঞ্জে পুলিশের অনেক স্থাপনা সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো সংস্কারেও কিন্তু অনেক অর্থের খরচ হবে। এই পুলিশ দিয়েই কিন্তু আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। আমি যতক্ষণ এই নারায়ণগঞ্জ জেলার দায়িত্বে আছি আপনাদের দাবি দাওয়াগুলো আমি সর্বাত্মকভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো। কাউকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করা হবেনা। আমরা এরই মধ্যে ছাত্রদের ছেড়ে দিয়েছি। যদিও বর্তমানে থানা পুলিশ, কোর্ট পুলিশ কেউ নেই। তবে খুব দ্রুতই তাদেরকে অর্গানাইজড করতে পারবো বলে আশা করছি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয় এবং ব্যাক্তিগত স্থাপনা রক্ষায় আপনারা যেভাবে এগিয়ে এসেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। যেকারণে গতকালের ঘটনা ঘটলো সেটা আমাদের সকলের মনের চোখ ও দুয়ার খুলে দিক। ভাল মন্দের পার্থক্য গড়তে শেখাক। সভাপতির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, এখানে সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা রয়েছেন। ঘটনার পরদিনই দ্রুত আমি সবাইকে ডেকেছি। আমরা একটি সুন্দর নারায়ণগঞ্জ চাই। সুশাসন যেখানে থাকবে ন্যায়বিচার থাকবে চাঁদাবাজি হবে না মাস্তানি হবে না মানুষ স্বাধীনভাবে চলতে পারবে সেরকম একটি নারায়ণগঞ্জ চাইলে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।