অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার আন্দিকোট ইউনিয়নের আকুবপুর গ্রামের সন্তান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গত বৃহস্পতিবার শপথ নেয়ার পর এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া এ উপজেলার গণযোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারীরা আসিফ মাহমুদের ছবি দিয়ে ফেসবুকে ব্যপক পোষ্ট করে। যা এরই মধ্যে ব্যপক ভাইরাল হয়েছে। ছোট বড় সবার মুখে আসিফ মাহমুদের নাম। এলাকাবাসীসহ এ উপজেলার মানুষ এখন তাকে নিয়ে ব্যপক আনন্দ-উল্লাসিত। আসিফ ১৯৯৮ সালে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার আন্দিকোট ইউনিয়নের আকুবপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। মো. বিল্লাল হোসেন মাস্টার ও রোকসানা বেগম দম্পত্তির ২য় তম সন্তান। জানা যায়, পরিবারের সদস্যদের না জানিয়েই আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। প্রথমদিকে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর তার পরিবার জানতে পারে যে সে আন্দোলনের সমন্বয়ক। তখন আসিফ মাহমুদকে বাড়িতে ফিরে আসতে অনুরোধ করে বাবা, মা ও বোনেরা। পরিবারের সদস্যদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আসিফ বলেন, আমার অনেক ভাই-বোন পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন, আমি আন্দোলন থেকে ফিরে আসবো না। হয় গুলি খেয়ে মরবো না হয় আন্দোলন সফল করে ঘরে ফিরবো। এরপর থেকেই আসিফ মাহমুদের পরিবারে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা শুরু হয় বলে জানান তার ছোট বোন ইফাত জাহান লামিয়া। তিনি আরো বলেন, ভাইয়া ৫ দিন নিখোঁজের সময় তার মা, বোনসহ পরিবারের সবার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়। ঘরে রান্না-বান্নাও হয়নি, বন্ধ থাকে পরিবারের সবার খাওয়া দাওয়া। আমরা ঢাকাতে লাশ ঘরে গিয়েও ভাইকে অনেক খুজেছি। এখন আন্দোলন সফল হওয়ার আমাদের অনেক ভালো লাগছে। আমরা চাই এমন খুনি, ফ্যাসিবাদী সরকার আর কখনো না আসুক। আসিফ মাহমুদের পিতা বিল্লাল হোসেন জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। অজানা আতংক আর উৎকণ্ঠা নিয়ে প্রতিদিন আসিফ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু ১৯ জুলাই তার সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তার পর বিভিন্ন যায়গায় তাকে খোঁজ করেও পাইনি তখন আমরা এক প্রকার দিশেহারা হয়ে যাই। ২৩ জুলাই ইত্তেফাক পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয় যে আসিফ মাহমুদকে গুম করা হয়েছে। তারপর আমরা শাহবাগ থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করতে গেলে দায়িত্বরত ওসি আমাদের জিডি নেয়নি। সেখানে থেকে যাত্রাবাড়ী থানায় যাই সেখানেও একই ভাবে আমাদের ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। তারপর ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে প্রতিটা ওয়ার্ডে খোঁজ করি কিন্তু আসিফের কোনো সন্ধান না পেয়ে হাসপাতালের লাশ ঘরে গিয়ে খোঁজাখুঁজি করেও পাইনি। তারপর প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আসিফের গুমের বিষয়টি দেশবাসীকে জানাই। ২৪ জুলাই হাতিরঝিল এলাকায় আসিফ মাহমুদকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় তাকে গনস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিলে সেখান থেকে ২৬ জুলাই পুলিশ পরিচয়ে আবারো তাকে তুলে নিয়ে যায়। ২৭ জুলাই ডিবি কার্যালয় থেকে ফোন করে জানায় আপনার ছেলে ডিবি কার্যালয় আছে এসে দেখে যান। আমি আর আসিফের মা সেখানে গিয়ে দেখা করলে তাদেরকে ছেড়ে দিবে বললেও পরে আর ছাড়েনি। ডিবি প্রধান হারুন সাহেব আমার থেকে ভিডিও রেকর্ড নিতে চেয়েছিল যে সমন্বয়করা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা সেচ্ছায় দিয়েছে কিন্তু আমি রাজি হইনি।
১ দিনপর আবারো ফোন করে আমাদের যেতে বলে তখন তাদের গাড়ি দিয়ে আসিফসহ আমাদেরকে বাড়ি পৌঁছে দেয়। তিনি আরো বলেন যে আসিফ মাহমুদ ছোট্টবেলা থেকেই একরোখা ছিল। যেখানে অন্যায় দেখতো সেখানেই প্রতিবাদ করতো। আসিফ মাহমুদ অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা হয়েছেন সে জেন তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে পারেন এজন্য দেশবাসীর কাছে আমি দোয়া চাই। তাছাড়া তিনি এই আন্দোলনে নিহত সবার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি দেয়াসহ সব সমন্বয়ক এবং আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার দাবিও করেন।