না.গঞ্জে পুলিশকে ফুল দিয়ে বরণ করল শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

আন্দোলন-সহিংসতার জেরে ১০ দিন পর সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ফিরেছেন পুলিশ সদস্যরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় ট্রাফিক সদস্যরা ও শিক্ষার্থীরা একে অন্যকে ফুল দিয়ে বরণ করে একসঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক স্থানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা এখনো আছেন। জানা গেছে, গত ৩ আগস্ট থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় বিজয়স্তম্ভ এলাকায় অবস্থান নেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ওইদিন থেকে শহরে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদেরকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। এরপর ৪ আগস্ট থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অসহযোগের ডাক দিলে চাষাঢ়ায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি জনতাও নেমে আসে। এ সময় বিক্ষুব্দ জনতা নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাব ভাঙচুরের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশ বক্সটিও ভাঙচুর করে। এ ছাড়া একই দিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় এবং ফতুল্লা মডেল থানাতেও হামলার ঘটনা ঘটে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানাতেও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। চাষাঢ়ায় ট্রাফিক বক্স ভেঙে অবকাঠামো লুটপাটের পাশাপাশি চাষাঢ়া পুলিশ ফাড়িতেও ভাঙচুর লুটপাট চলে। এতে করে গত ১০ দিন ধরে নারায়ণগঞ্জ থেকে উধাও হয়ে যান ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জে সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়েছিল। তখন সেই দায়িত্ব সামলাতে মাঠে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং স্কুলের শিক্ষার্থীদের। সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযানেও অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। গত কয়েকদিন নারায়ণগঞ্জের প্রায় সব রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে দিন-রাত ঘাম ঝরিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ কাজে তারা যাত্রীদের প্রশংসাও পেয়েছেন। অনেক সড়কে শিক্ষার্থীদের খাবার পানি, খাবার এবং ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে অনেকে। পুলিশের অনুপস্থিতিতে যানজটের এই শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বিএনসিসি, রোভার, আনসার সদস্য ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যদেরও কাজে লাগানো হয়।

এদিকে কর্মস্থলে নিরাপত্তা, ৫ আগস্ট এবং পূর্ববর্তী সহিংসতায় আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণ, পুলিশে সংস্কারসহ ১১ দফা দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করছিলেন পুলিশ সদস্যরা। পরে কর্মবিরতিসহ সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যরা। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইজিপিসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে দাবি পূরণের প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের ৭টি থানার মধ্যে ৬টি থানার কার্যক্রম চালু হয়েছে। তবে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে কাজে যোগ দেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। এ সময় নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের টিআই (এডমিন) এম এ করিম, টিআই ইমরানসহ ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া রোভার স্কাউটসের পক্ষে নারায়ণগঞ্জ কলেজের শিক্ষক আরিফ মিহিরসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ট্রাফিক পুলিশ ও দায়িত্ব পালন করা শিক্ষার্থীরা একে অন্যকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে দেখা যায়। শিক্ষক আরিফ মিহির ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মানবিক পুলিশ হওয়ার আহ্বান জানান। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরাও আগামী দিনে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি দেন।