১০ বছর আগে নরেন্দ্র মোদি যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন তার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিটি দেশের নেতারাও ছিলেন। আর এই বিষয়টি তার ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ বা ‘প্রতিবেশী প্রথম’ বৈদেশিক নীতিকেই প্রতিফলিত করেছিল। সে সময় এই নীতির উদ্দেশ্য ছিল ভারতের ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে নয়াদিল্লির সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক সমন্বয় গড়ে তোলা। তবে সীমান্ত বিরোধ এবং দ্বিপাক্ষিক মতানৈক্য, ভারতের পক্ষ থেকে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বিলম্বিত সম্পাদন এবং এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে মোদির সেই বৈদেশিক নীতিটি খুব শিগগিরই ব্যর্থ হয়ে যায়। অবশ্য এই নীতির অধীনে বাংলাদেশকে ভারতের উজ্জ্বল সাফল্য হিসেবে দেখা হয়েছিল। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- যিনি এই মাসে চাপের মুখে পদত্যাগ করার আগে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। মোদির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন; তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উভয় দেশের জন্য লাভজনক পরিস্থিতি বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশে গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় আসা সত্ত্বেও পরবর্তীতে হাসিনা একজন কর্তৃত্ববাদী শাসকে রূপান্তরিত হন। তার বিরুদ্ধে জনমনে ক্ষোভ বাড়তে থাকে; আর সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদণ্ডবিক্ষোভ ছিল সেই ক্ষোভের চূড়ান্ত ট্রিগার। একপর্যায়ে ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে হাসিনা গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান এবং বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কাছে হাসিনার দারুণ অজনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তার এই পদত্যাগ ভারতীয় রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সংস্থার জন্য বড় একটি ধাক্কা হিসাবে সামনে এসেছে। ভারত তার শাসনামলে হাসিনাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে গেছে, আর সেটিও আবার অন্যান্য স্টেকহোল্ডার এবং বাংলাদেশের জনগণের উদ্বেগ উপেক্ষা করে।