ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে রংপুর মেডিকেল কলেজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান

শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে রংপুর মেডিকেল কলেজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে রংপুর মেডিকেল কলেজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার মো. জাকির হোসেন। এসময় বিভাগীয় কমিশনার বলেন, শিক্ষার্থীরা রংপুর মেডিকেল কলেজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার যে চমৎকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তাকে আমি সাধুবাদ জানাই। কিছু দিন আগে শিক্ষার্থীরা দেশের পরিবর্তন আনার জন্য অনেক আত্মত্যাগ করেছে। শিক্ষার্থীদের সমসাময়িক কার্যক্রম প্রসঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, শিক্ষার্থীরা শুধু আন্দোলনের মাঠে সীমাবদ্ধ থাকেনি, তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মতো সুন্দর বিষয়ে মনোনিবেশ করেছে। শিক্ষার্থীরা এখন জাতিকে পথ দেখাচ্ছে। তারা দেশের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, জঞ্জাল- সব পরিষ্কার করতে উদ্যোগী হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক ভাবনা থেকে বিচ্যুত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে তোমাদের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। বিভাগীয় কমিশনার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বাস্তবায়নের উপর গুরত্বারোপ করেন এবং রংপুর সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন। বিভাগীয় কমিশনারের বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা পাঁচটি দলে বিভক্ত হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

রংপুরে একই দিনে চার নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ, আটক এক

রংপুর নগরীর রংপুর নবজাতক, শিশু ও প্রসূতিসেবা হাসপাতালে একইদিনে চার নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার সকালে হাসপাতালের এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন সুমাইয়া আক্তার, ববিতা রানী, জবা রানীর নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। রাতে এক ভুক্তভোগী থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। পুলিশ রাতেই হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলমকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। এ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে চিকিৎসক, ব্যবস্থাপকসহ হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে গেছে। গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ করে সংশ্লিষ্টদের বিচার দাবি করেন। এত কম সময়ের ব্যবধানে এতগুলো নবজাতকের মৃত্যুর এ ঘটনাটি ঘটেছে নগরীর রংপুর নবজাতক শিশু ও প্রসূতিসেবা হাসপাতালে। মারা যাওয়া নবজাতকদের বয়স ৪ থেকে ১২ দিন। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়, ওই নবজাতকগুলোকে ভর্তির পর থেকে হাসপাতালের কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখতে আসেননি। প্রয়োজনমাফিক কোনো চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বরং শিশু মারা যাওয়ার পরেও টাকার লোভে এনআইসিইউতে রেখে বিল বাড়ানো হয়েছে। পরে অভিভাবকদের রোষানলে পড়ে নবজাতকগুলো মারা যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ।

পরিবারগুলোর অভিযোগ, চিকিৎসাজনিত অবহেলার কারণে ২৪ ঘণ্টার ভেতর চার নবজাতকের মৃত্যু হলেও এর দায় এড়িয়ে উল্টো ব্যবসায়িক মনোভাব দেখায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অসহায় পরিবারগুলোকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হাজার হাজার টাকার রশিদ ধরিয়ে দিয়ে বিল পরিশোধের চাপ দিতে থাকেন তারা। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সদস্যরা। বিষয়টি জানাজানি হলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হন। মারা যাওয়া এক নবজাতকের অভিভাবক আশিকুর রহমান জানান, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তার স্ত্রী। পরে মেডিকেলে সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হয়। সন্তান জন্ম নেয়ার পরপরই চিকিৎসকরা এনআইসিইউতে নিতে বলে। কিন্তু মেডিকেলের এনআইসিইউতে সিট না থাকায় এক দালাল তার সন্তানকে নবজাতক শিশু ও প্রসূতিসেবা হাসপাতালে ভর্তি করাতে প্রলুব্ধ করেন। পরে সন্তানকে সুস্থ করতে এই হাসপাতালে ভর্তি করেন তিনি। কিন্তু ভর্তির চার দিন হয়ে গেলেও কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা মেলেনি ওই হাসপাতালে। ভালো নার্সও পাওয়া যায়নি সেখানে। আয়ারাই নার্সের কাজ করেন।

আশিকুর রহমান বলেন, চিকিৎসকের কথা জিজ্ঞাসা করলেই আসছে, কিছুক্ষণ পর আসবে, আজকে আসবে না, কালকে আসবে- এসব বলে কাটিয়ে দিচ্ছিল তারা। এভাবে চার দিন অতিবাহিত হলেও চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায়নি। শেষমেশ আমার সন্তানকে তারা মেরেই ফেললো। আমি এই হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একই অভিযোগ অন্য অভিভাবকদেরও।

হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক আশরাফুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়। এরপর শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আরো তিন নবজাতক শিশু মারা যায়। যাদের তত্ত্বাবধানে এসব নবজাতকের চিকিৎসাসেবা দেয়ার কথা ছিল, তাদের কেউ হাসপাতালে ছিল না বলে অভিভাবকরা দাবি করছেন। কিন্তু আমার জানা মতে, চিকিৎসার কোনো কমতি হয়নি। এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম সরদার বলেন, শুক্রবার রাতে এক ভুক্তভোগী থানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে। আমরা তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত