যারা হাসিনার সরকারকে শক্তিশালী করেছে তাদের সরিয়ে দিন

শুধু বুদ্ধিজীবী আর এনজিওকর্মী নয়, বিপ্লবীদের দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকারকে যারা শক্তিশালী করতে সহযোগিতা করেছে, উপদেষ্টা পরিষদে থাকলে তাদের সরিয়ে দিন, প্রশাসনে থাকলে তাদের সরিয়ে দিন। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে হত্যাকারী দুর্বৃত্তদের সেনানিবাসে জায়গা দিয়ে সেনাবাহিনী ভুল করেছে। সেনানিবাসে যাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে অবিলম্বে তাদের তালিকা প্রকাশ করা হোক। গতকাল রোববার সকালে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিপ্লব এখনো থমকে আছে দাবি করে মেজর হাফিজ বলেন, আয়নাঘরের নামে যারা মানুষ হত্যা করেছে, গুম করেছে তারা বহাল তবিয়তে আছে, প্রত্যেকটি জেলায় পুলিশ কর্মকর্তারা আগের মতোই আছেন। তারাই আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছেন।

তিনি বলেন, যারা আয়নাঘর তৈরি করেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উচিত ছিল সাংবাদিকদের নিয়ে ওই ঘৃণ্য স্থান দেখানোর, কীভাবে নিরীহ মানুষদের তারা অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে, হত্যা করেছে। আয়নাঘরের স্রষ্টাদের কিছু হচ্ছে না, শুধু একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০ দিন অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু এখনো মনে হয় না বিপ্লবীদের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শুধু আসিফ নজরুল ছাড়া এই বিপ্লবে কাউকে অংশ নিতে দেখিনি। দ্রুত আয়নাঘরের কারিগরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

সেনাপ্রধানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীকে এমনভাবে রাখবেন, তাদের আচরণ এমন হওয়া উচিত যেন তাদের দেখে মনে না হয় তারা জনগণের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছেন। অবিলম্বে যে ৪৮৭ জন সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের তালিকা প্রকাশ করুন। ভয়ের কী আছে? বিপ্লব সফল করতে হলে এ দুর্বৃত্তদের দমন করতে হবে। আমরা এই বিপ্লবের একটা সফল পরিণতি দেখতে চাই।

‘আশা করবো আপনারা সবসময় জনগণের পক্ষে থাকবেন, পাশে দাঁড়াবেন। ভুলে যাবেন না আপনারা জনগণের প্রভু নন। আপনাদের আচরণে বিনয় থাকতে হবে যেন মহান বিপ্লবের আগস্টের কোনো ক্ষতি না হয়।’ বলেন এই বিএনপি নেতা।

মেজর হাফিজ বলেন, প্রয়োজন হলে উপদেষ্টা পরিষদে আরো ছাত্রদের সম্পৃক্ত করুন, যারা এই বিপ্লবে অংশগ্রহণ করেছেন। বুদ্ধিজীবীদের প্রয়োজন নেই যারা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেন, দুঃসময়ে নিশ্চুপ থাকেন, আর বিজয়ের পরে এসে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। প্রকৃত বিপ্লবীদের নিয়ে সরকার গঠিত হোক, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজের উদ্দেশে হাফিজ উদ্দিন আরো বলেন, বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা হবেন না। পাশের দেশে বসে শেখ হাসিনা অনেক ষড়যন্ত্র করবে, সুতরাং আপনারা সজাগ থাকবেন, সতর্ক থাকবেন। আপনারা রাজপথে থাকুন, যে কোনো ধরনের প্রতি বিপ্লবের চেষ্টা হলে সবাই মিলে তা ব্যর্থ করে দিতে হবে। বিএনপি আপনাদের সঙ্গে আছে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো থাকবে, তবে মূল শক্তি হিসেবে আপনারা ছাত্ররা রাজপথে থেকে সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবেন। তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকারকে বিদায় করেছে। তাদের অভিনন্দন জানাই। বিপ্লব কিন্তু শেষ হয়নি, বিপ্লব থমকে আছে।