বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর আদাবরে পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদ ও সাবেক প্রধান প্রতিবেদক-উপস্থাপক ফারজানা রুপাকে আবার পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত এই আদেশ দেন।
উত্তরা থানার একটি হত্যা মামলায় চার দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ার পর গতকাল সোমবার সাংবাদিক শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। একই সঙ্গে গত রোববার গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপকে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আবদুস সোবহান গোলাপকে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়। তিনজনকেই আদাবর থানায় দায়ের করা রুবেল হত্যা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত শাকিল-ফারজানা দম্পতিকে পাঁচ দিন এবং আবদুস সোবহান গোলাপের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
শাকিল আহমেদ ও ফারজানা রুপা কয়েক বছর ধরে একাত্তর টেলিভিশনে কাজ করছিলেন। ৮ আগস্ট তাদের ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় একাত্তর টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ। এরপর ২১ আগস্ট তাদের ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করে পুলিশ। সেদিন তারা টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে যাওয়ার উদ্দেশে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন। পরে তাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ফজলুল করিম নামে একজন নিহতের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ৮ আগস্ট একাত্তর আদাবর থানা এলাকায় পোশাকশ্রমিক রুবেল হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এ মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, সাকিব আল হাসান ও চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদসহ ১৫৬ জনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করা হয়। গত ২২ আগস্ট পোশাক শ্রমিক রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আদাবর থানায় মামলাটি করেন।
বাদী এজাহারে অভিযোগ করেন যে, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের মদতে সরকারি চাকরিতে অন্যায় ও বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা বহালের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও তাদের মদতপুষ্ট অনুগতদের চাকরিতে নিয়োগের সুযোগ প্রদানের চক্রান্ত ও অপচেষ্টা করলে দেশের সমগ্র ছাত্র সমাজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের এই বৈষম্যমূলক অন্যায় ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করে। ছাত্র জনতার শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত ও বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্যে ১ নম্বর আসামি শেখ হাসিনা ওয়াজেদ গত ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনকারী ছাত্রদের রাজাকারের নাতি-পুতি বলে অভিহিত করে। শেখ হাসিনা এরূপ উদ্দেশ্যমূলক ঘৃণ্য মিথ্যা, কুৎসা ও উৎকানিমূলক এবং অপমানজনক বক্তব্য দিয়ে পরিকল্পিতভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুভূতিতে আঘাত করে চলমান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে উসকে দিয়ে সারাদেশে সহিংস আন্দোলনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন।
১৪ নম্বর আসামির দিক নিদের্শনায় গত ১৫ জুলাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যলয়ে ২ নম্বর আসামিসহ ২২ নম্বর থেকে ৯৬ নম্বর আসামিরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী কোমলমতি শিক্ষার্থী ও জনতার ওপর গুরুতর রক্তাক্ত আঘাত, অঙ্গহানী, নারীর শ্লীলতাহানিসহ নারকীয় গণহত্যা ও হত্যাকাণ্ড সংঘটনে অপরাধমূলক পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করে। উক্ত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে নিয়ে ২ নম্বর আসামি গণমাধ্যমে আন্দোলনকারী কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জবাব ও মোকাবিলা করার জন্য ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আসামি সাদ্দাম হোসেন গত ১৫ জুলাই তারিখে ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে হুমকি দিয়ে বলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শেষ দেখিয়ে ছাড়ব।
এ ছাড়াও গত ১৫ জুলাই আসামি তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উসকানি দিয়ে বলেন রাজাকারের দল তোরা, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ছাড় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ২ নম্বর আসামি গত ১৭ জুলাই ঢাকা জেলা ও মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ছাত্রজনতার ওপর হামলা, গুম, খুনসহ সহিংসতা ছড়ানোর জন্য বলেন। ২৬ নম্বর আসামি অন্যান্য আসামিদের অপরাধ কার্য নির্বিঘ্নে সংঘটিত করার লক্ষ্যে এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট করার নিমিত্তে সারাদেশে একযোগে ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ রাখেন।
উপরোক্ত আসামিদের অবৈধ ও বেআইনি দিক নির্দেশনা এবং ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নির্বিচারে গুলি চালানোর জন্য নিজ নিজ বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা প্রদান করেন।
ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আত্মগোপনে থাকা দলটির প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপকে গত রোববার রাজধানীর নাখালপাড়া থেকে আটক করে পুলিশ।