গুমের শিকার ব্যক্তিদের মুক্তি নিশ্চিতসহ ১২ দাবি সিএআই’র
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
গুমের শিকার ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ ও তাদের দ্রুত মুক্তি নিশ্চিতসহ ১২ দফা দাবি জানিয়েছে ‘কাউন্সিল অ্যাগাইনস্ট ইনজাস্টিজ (সিএআই)। গতকাল শুক্রবার গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আয়োজিত এক নাগরিক সভায় সংগঠনটির নেতারা এসব দাবি জানান। আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে এ নাগরিক সভার আয়োজন করে সিএআই। তাদের দাবিগুলো হলো- ১. পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন : র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), সন্ত্রাস বিরোধী ইউনিট (এটিইউ), এবং কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) এর মতো বিশেষ বাহিনীর বেআইনি কার্যক্রম নজরদারি ও প্রতিরোধের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি স্থাপন করতে হবে। এ কমিটিতে জনসাধারণ কর্তৃক নির্বাচিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যারা ভুক্তভোগীদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। ২০০৯ সাল থেকে হাসিনা সরকারের শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার, বিশেষ করে র্যাব দ্বারা সংঘটিত জোরপূর্বক শুম এবং বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমস্ত ঘটনার বিস্তারিত বিবরণসহ একটি হোয়াইট পেপার প্রকাশ করতে হবে। ২. গোপন নির্যাতন কক্ষ উন্মোচন এবং সিলগালা : বিভিন্ন অঞ্চলে র্যাবের নিয়ন্ত্রণাধীন গোপন নির্যাতন কক্ষগুলোকে জাতীয় মিডিয়ার মাধ্যমে উন্মোচিত করতে হবে এবং ভবিষ্যতে এদের ব্যবহার প্রতিরোধ করতে সেগুলো চিরতরের জন্য সিলগালা করে দিতে হবে। এ কক্ষগুলো যেন পুনরায় ব্যবহার না হয় সে জন্য পরিপূর্ণ আইন প্রণয়ন করতে হবে। ৩. ভুক্তভোগীদের তালিকা প্রকাশ এবং মুক্তি : জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের তালিকা অবিলম্বে প্রকাশ করতে হবে এবং তাদের মুক্তি দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। ৪. মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার : র্যাব কর্তৃক দায়ের করা সব মিথ্যা ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ মামলা নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহার করতে হবে। ৫. ওয়ারেন্টবিহীন গ্রেপ্তার সম্পর্কিত আইন : ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে স্পষ্ট অভিযোগ এবং প্রমাণ থাকা আবশ্যক, এবং এটি পরিবারের সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জানার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এ মর্মে একটি আইন প্রণয়ন করতে হবে। এ নিয়ম লঙ্ঘনকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ৬. পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ : জোরপূর্বক গুমের শিকার ভুক্তভোগী এবং তাদের পরিবারকে যথাযথ পুনর্বাসন ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। ৭. মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা : মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত সব ব্যক্তিকে জনগণের শত্রু হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং তাদের জবাবদিহিতার আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ৮. বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন : জোরপূর্বক গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য তড়িৎ বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। ৯. আন্তর্জাতিক তদারকি কমিটি : জাতিসংঘ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার তত্ত্বাবধানে একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে যাতে এই অপরাধমূলক কার্যকলাপগুলি সম্পূর্ণরূপে তদন্ত করা যায়। ১০. স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন : দ্রুততম সময়ের ভেতর স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি কমিশন গঠন করতে হবে। যারা বিগত দিন গুলির সমস্ত বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও আটকের বিচার নিশ্চিত করবেন। এই কমিশন কে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা দিতে হবে, যেন তাদের পরিবার ও তাদের জান মালের উপর কোনো রকম আক্রমণ না হয়। বাহিনী সমূহের অভ্যন্তরীণ সাজা বাতিল করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ১১. ইনডেমনিটি অ্যাক্ট বাতিল করতে হবে। ১২. পুরাতন অধ্যাদেশ বাতিল : জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব বাহিনীর পুরাতন অধ্যাদেশ বাতিল করে, নতুন করে সংস্কার করতে হবে। সময়োপযোগী এবং জনকল্যাণ নিশ্চিত করে এমন অধ্যাদেশ প্রনয়ণ করতে হবে। সভায় গুমের শিকার কয়েকজন তাদের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। এ সময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সিএআই এর আহ্বায়ক শের মুহাম্মাদ সাঈদ, মানবাধিকার কর্মী ব্যরিস্টার সারওয়ার হোসেইন, সাংবাদিক ও কলামিস্ট মুহিব খান ও সাইয়েদ মাহফুজ খন্দকার।