ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজারে ডিবি ওসির কক্ষে জামাই আদরে আসামি

কক্সবাজারে ডিবি ওসির কক্ষে জামাই আদরে আসামি

রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় আনসার সদস্য কর্তৃক হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তারকৃত আনসার সদস্য মিজানুর রহমানকে কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবির) কার্যালয়ে জামাই আদরে রাখার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে গ্রেপ্তারকৃত মিজানুর রহমান ওসির কক্ষে খোশগল্প করার খবর প্রতিবেদকের কাছে আসে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে প্রতিবেদক বিকালে ডিবি কার্যালয়ে গেলে তার সত্যতা মিলে। ওই সময় দেখা যায়, ডিবি ওসির কক্ষে ওয়াশরুমে একজন লোকের শব্দ শুনা যাচ্ছিল। মিনিট পাঁচেক পর বের হন লুঙ্গি, টি-শার্ট পরা একজন লোক। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ওসির রুমে পাশের চেয়ারে বসেন। অন্য লোকের সাথে মিজানুর রহমানের জন্যও চা আনা হয়। অনেকটা জামাই আদরে খোশগল্প করে সময় পার করতে দেখা যায় মিজানুর রহমানকে। চাঞ্চল্যকর মামলার একজন আসামি এভাবে জামাই আদরে থাকার বিষয় নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল। ওই সময় প্রতিবেদকের কাছে কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, কক্সবাজারের মতো জায়গায় ডিবি কার্যালয়ে আসামি রাখার জায়গা (সেলঘর) না থাকায় এবং চাঞ্চল্যকর মামলায় আসামি হওয়ায় কেউ যাতে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে না পারে সেজন্য আমার কক্ষে রাখা হয়েছে। তবে তার বক্তব্যের উল্টো দেখা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত মিজানুর রহমানের সাথে স্থানীয় ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিনসহ তার স্বজনরা খোশগল্প করতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউপি সদস্য নাছির উদ্দিন স্থানীয় ইউনিয়ন আ.লীগের নেতা। স্থানীয় আ.লীগ নেতাদের তথ্য মতে, নাছির কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদকের প্রার্থী ছিল। পরে ওই কমিটিতে তাকে সহসভাপতি করা হয়।

চাকরি জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে গত রোববার সচিবালয়ে ভাঙচুর ও অবরুদ্ধ করে রাখেন আনসার সদস্যরা। পরে সচিবালয়ে আটকেপড়া উপদেষ্টা, সমন্বয়ক ও সচিবসহ কর্মকর্তাদের উদ্ধারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা গেলে তাদের সঙ্গে আনসার সদস্যদের সংঘর্ষ হয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও সেনা সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় সাধারণ আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে ডিএমপির তিন থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ৪২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০ হাজার আনসার সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। তিন মামলায় এখনো পর্যন্ত ৩৬৯ জন আনসার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টায় কক্সবাজারের রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের রাবারবাগান এলাকায় গাঢাকা দিয়ে থাকা আনসার সদস্য মিজানুর রহমানকে ধরে ডিবির কাছে হস্তান্তর করে স্থানীয়রা। গ্রেপ্তারকৃত মিজানুর রহমান কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের বাসিন্দা জাফর আলমের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, গত সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই আনসার সদস্যকে ধরতে কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশি চালায়। পরে তাকে না পেয়ে বিষয়টি এলাকাবাসীদের অবগত করেন। পরদিন মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাবারবাগান থেকে আনসার সদস্য মিজানুর রহমানকে ধরে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করে এলাকাবাসী।

কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল ইসলাম জানান, ৩ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকালে আমার কাছে একটি মুঠোফোনে কল আসে। কলের মাধ্যমে জানতে পারে যে, সে রাবার বাগানে আত্মগোপনে আছে। পরে সবাই মিলে রাবার বাগান ঘেরাও করে তাকে আটক করে ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিকে এসময় মিজানুর রহমানের আশ্রয়দাতা আরো একজনকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হলেও তাকে স্থানীয় মেম্বারের জিম্মায় দেয়া হয়।

অন্যদিকে গ্রেফতারকৃত মিজানুর রহমান ডিবির ওসির কক্ষে আলোকিত বাংলাদেশের কাছে দাবি করেন, সে নির্দোষ। সে আন্দোলনে গেলেও হামলা-ভাঙচুরের সাথে জড়িত ছিল না বলে দাবি করেন। তবে তার ফেইসবুক ওয়ালে দেখা গেছে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সে সক্রিয় ছিল। তার পরিবারের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার বাবা একজন সাধারণ মানুষ হলে মিজানুর রহমান আ.লীগের সুবিধাভোগী লোক। মিজানুর রহমান ঢাকার রেডিসন ব্লু হোটেলে কর্মরত ছিল।

কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, গতকাল সকালে রামুর কাউয়ারখোপ থেকে স্থানীয়দের সহাতায় তাকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে সে আমাদের কাছে আছে, পরবর্তী কার্যক্রম শেষ করে আদালতের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

যোগাযোগ করা কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘একজন আসামিকে আনার পর যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন না হয় সেদিকে খেয়াল করে হয়তো ডিবি ওসির কক্ষে রাখা হয়েছে। তবে আসামি তো চেয়ারে বসে চা খাচ্ছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আপনাকে আবার জানাচ্ছি। শেষ পর্যন্ত পুনরায় কল দেননি এই কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, এর আগে ওসি জাবেদ মাহমুদ কক্সবাজারের চকরিয়া থানায় ছিলেন। আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় তার ছত্রছায়ায় আ.লীগ সন্ত্রাসীরা গুলি চালান। ওই সময় একজন মারা যান। ওই ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করেন। তাকে চকরিয়া থেকে অদক্ষতার অভিযোগ এনে ৩ মাস ১৬ দিনের মাথায় প্রত্যাহার করে ডিবিতে পদায়ন করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত