নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের মুসাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলিনের পর ছোট ফেনী নদীর অব্যাহত ভাঙনে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মানচিত্র দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তা-ঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন আতঙ্কে আনেকে ঘর-বাড়ি রেখে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। কেউ কেউ ভবন ভেঙে রড ও আসবাব পত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। চরদরবেশ ইউনিয়নের দক্ষিণ চরদরবেশ, আদর্শগ্রাম, পশ্চিম চরদরবেশ, কাজীর স্লুইজ গেইট, তেল্লার ঘাট, ইতালি মার্কেট, ধনী পাড়া, চরচান্দিয়ার সাহেবের ঘাট, মোল্লার চর, পশ্চিম চরচান্দিয়া, বগদানানার আলমপৃর, আউরারখিল, চরমজলিশপুর ইউনিয়নের চরবদরপুর, কুঠির হাট কাটা খিলা, কালি মন্দির, আমিরাবাদ ইউনিয়নের বাদামতলী, গুচ্ছগ্রামসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় ছোট ফেনী নদীর ওপর নির্মিত নোয়াখালী কোম্পানীগঞ্জ ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সাহবের ঘাট সংযোগ সেতুর সড়কেও বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। চরচান্দিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, মুসাপুর রেগুলেটরটির নির্মাণ কাজ ২০০৫সাল থেকে শুরু হয়ে কাজ শেষ হয় ২০০৯ সালে। মুসাপুর ক্লোজার কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালে। ভারতীয় বন্যার পানির চাপে গত ২৬ আগস্ট রেগগুলেটরটি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। এতে নতুন করে সমস্যার সৃষ্টি হয়। ফেনী জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সামছুউদ্দিন খোকন বলেন, মুসাপুর রেগুলেটরটি ভেঙে যাওয়ায় ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে। রেগুলেটরটি নির্মাণ ত্রুটিতে যে বা যারা জড়িত তাদের শাস্তিও দাবি করেন। তিনি আরো দাবি করেন অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের কারণেও রেগুলেটরটি আজ নদীতে হারিয়ে গেছে। চরচদরবেশ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, মুসাপুর রেগুলেটর নদীতে হারিয়ে যাওয়ার ফলে দু’পাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে নতুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। একের পর একে বাড়ি হারাচ্ছে এ জনপদের বাসিন্দারা। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলাকে বাঁচাতে হলে মুসাপুর রেগগুলেটরটি দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন করে নির্মাণ করতে হবে।
চরবদরপুর গ্রামে শতশত ঘর বাড়ি ও ফসলি জমি ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে দাবি করে চরবদরপুর জামে মসজিদের সেক্রেটারি আবুল কাসেম বলেন, মুসাপুর রেগুলেটর নির্মাণের পর থেকে এ জনপদের মানুষগুলো আশায় বুক বেধেছিল। নতুন নতুন দালান ঘর, পাকা মসজিদ নির্মাণ সহ রাস্তা-ঘাট পাকা করেছিল। গত ২৬ আগস্ট ভারতীয় বন্যার পানিতে বিলিন হয়ে যায় মুসাপুর রেগুলেটর। এর ফলে সোনাগাজী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রামীণ জনপদ ও বিস্তির্ণ চরাঞ্চলে ছোট ফেনী নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। তেমনি চরবদরপুর গ্রামটিও আজ নদী ভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন পাউবো কর্তৃপক্ষ যদি প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন না করে তাহলে অচীরে চরবদরপুর গ্রামসহ সোনাগাজী উপজেলা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে হাজার হাজার লোক সর্বহারা হয়ে পড়বেন। জহিরুল ইসলাম বলেন, মানুষের ঘরবাড়ি, দোকান-পাট, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুরেই ভাঙনের হুমকিতে রয়েছেন। মুসাপুর রেগুলেটর প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করে সড়ক, মানুষের ঘরবাড়ি, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করতে হবে। আরিফুল ইসলাম বলেন, ছোট ফেনী নদীর ভাঙন আতঙ্কে সোনাগাজী উপজেলার লোকজন নির্ঘুম রাত যাপন করছেন। একটি পাকা সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন এলাকাবাসী। সাহাব উদ্দিন বলেন বর্তমান সরকার যেন গুরুত্ব সহকারে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোর লোকদের রক্ষা করেন। অন্যথায় মানুষের মাথাগোঁজার ঠাই থাকবেনা। ধনী পাড়ার বাসিন্দা মো. মিলন বলেন নদী তীরবর্তী লোকদের আহাজারি দেখার কেউ নেই। প্রতি দিন তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে নদী ভাঙন। সম্ভাবনাময় উপজেলাটি নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। সোনাগাজী উপজেলা জামায়াতের আমির মো. মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশের মানচিত্রে সোনাগাজী ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাকে বাঁচাতে হলে মুসাপুর রেগুলেটর পূণঃনির্মাণ এবং ভাঙন কবলিত এলাকায় নতুন প্রকল্প দিতে হবে। তবে স্থায়ী সমাধান করতে হলে রেগুলেটরটি দ্রুত পনর্নির্মাণ করতে হবে। সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি জেনেছি। পাউবো সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি। মুসাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার পর দুই উপজেলার বাসিন্দারাই নদী ভাঙনের কবলে পড়েছেন। আগ্রাসী নদী ভাঙনের ফলে দুই উপজেলার বাসিন্দাদের মাঝে নতুন আতঙ্ক শুরু হয়েছে।