স্বেচ্ছায় প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ কার্যকর করছে না ইউএনও!

প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার

কক্সবাজারের রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবছার উদ্দীন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও তা কার্যকর করছে না অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনওর বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগের বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন ইউএনও। এইদিকে গতকাল রোববার পদত্যাগের বিষয়টি কার্যকর করার দাবিতে স্কুল প্রাঙ্গণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, আবছার উদ্দিন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রধান শিক্ষকের শ্যালকের প্রভাবের কারণে স্কুলের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অনিয়মে জড়িত। এসবের মধ্যে রয়েছে স্কুলের ফি ও জোরপূর্বক কোচিং বাণিজ্য, দোকান ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ, স্কুলের জমি বিক্রি সংক্রান্ত অনিয়ম, নিয়মিত ক্লাস না নেয়া, এবং দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছে। শিক্ষার্থীরা আরো জানান স্কুলের জমি ক্রয় করার টাকার হিসাবও প্রদান করা হয়নি।

বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা স্কুলের পরিচালনায় অনিয়মসহ ১০টি অভিযোগ তুলে ধরে একদফা দাবিতে স্লোগান দেন এবং মিছিল করেন। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে আবছার উদ্দিন পদত্যাগ কার্যকর করার দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা আরো জানান, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। শিক্ষার্থী মো. এহেসান জানান, কচ্ছপিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে মানববন্ধন করি। প্রধান শিক্ষক আবছার উদ্দিন পদত্যাগ চেয়ে এক দফা দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়।

শিক্ষার্থী হুমাইয়া জান্নাত জানান, দীর্ঘদিন ধরে ওই শিক্ষকের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। গত মঙ্গলবার দাবি ছিল একদফা। দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের পদত্যাগ। পরে দাবি অনুসারে তিনি পদত্যাগপত্র ম্যানেজিং কমিটি বরাবর জমা দেয়।

স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকরা জানান, তারা শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। আবছার উদ্দীন ছাত্রদের আন্দোলনে মুখে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার পরেও আবারো স্কুলের সুষ্ঠ পরিবেশকে অশান্ত করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে কচ্ছপিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি ও রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রছাত্রীর দাবিতে প্রধান শিক্ষক তার দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছে। তার পদত্যাগ পত্রও পেয়েছি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না পাওয়ায় ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। তিনি আরো বলেন, ওই বিদ্যালয়ে অন্য একজনকে শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

ইউএনওর বক্তব্য সূত্র খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দায়িত্ব দেয়া ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছে। যার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) সকালে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে শাহ সোজা রোড় প্রায় ২ কিমি. সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে এক পর্যায়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন রামু উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল ইসলাম। পরে বিকালে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে ম্যানেজিং কমিটির কাছে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ চেয়ে আবেদনপত্র জমা দেন ওই শিক্ষক। তিনি স্বেচ্ছায় প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

পরে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষা অফিসার নিজে হ্যান্ড মাইক হাতে নিয়ে বলেন, আজকে থেকে এই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী প্রধান। লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।