ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অভিযোগ গ্রহণ

ঠাকুরগাঁওয়ে হিন্দুর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও মহেশপুরে জমি দখল করে খেলার মাঠ

ঠাকুরগাঁওয়ে হিন্দুর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও মহেশপুরে জমি দখল করে খেলার মাঠ

গত শনিবার চ্যানেল আই অনলাইনে প্রকাশিত ‘ঠাকুরগাঁওয়ে হিন্দু পরিবারের বাড়িতে দুর্বৃত্তদের অগ্নিসংযোগ’ সংক্রান্ত সংবাদ প্রতিবেদন এবং দেশ রূপান্তর পত্রিকায় ‘সংখ্যালঘুর জমি দখল করে খেলার মাঠ’ বিষয়ক সংবাদের প্রতি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ঘটনা দুটি আমলে নিয়ে দুটি স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে। ঠাকুরগাঁওয়ে ৪টি হিন্দু পরিবারের বাড়িতে দুর্বৃত্ত কর্তৃক অগ্নিসংযোগের অভিযোগের বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণ করতে, ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, ঝিনাইদহের মহেশপুরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর জমি দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালী কর্তৃক খেলার মাঠ বানানোর অভিযোগের বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে একই সময়ের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণ করতে ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁওয়ের ঘটনায় গৃহীত সুয়োমটোতে চ্যানেল আই অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনের বরাতে উল্লেখ রয়েছে, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বানা গাও সরদারভিটা গ্রামের ৪টি হিন্দু পরিবারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। ধনতলা ইউপি চেয়ারম্যান সমরনাথ চ্যাটার্জি জানান, গত শুক্রবার গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা ৪টি পরিবারের বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো হলো, নিশিকান্ত রায়, বিকাশ চন্দ্র সিংহ, তরুণী রায় ও ভোলানাথচন্দ্র সিং।

স্থানীয়রা জানান, ভোলানাথ ও বিকাশ চন্দ্র রায়ের বাড়ি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত শনিবার বিকালে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ সুপার বলেন, তদন্ত শেষে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে।

এ বিষয়ে কমিশনের সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু ৪টি হিন্দু পরিবারের বাড়িতে দুর্বৃত্ত কর্তৃক অগ্নিসংযোগের অভিযোগটি অত্যন্ত নিন্দনীয় ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এছাড়াও বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের আশংকা বহির্বিশ্বে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ হতে পারে। তাই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন। ইতিপূর্বেও ২০২৩ সালে ঠাকুরগাঁওতে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় কমিশন উদ্বেগ প্রকাশ করে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। এ অবস্থায়, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বানাগাও সরদারভিটা গ্রামের ধর্মীয় সংখ্যালঘু ৪টি হিন্দু পরিবারের বাড়িতে দুর্বৃত্ত কর্তৃক অগ্নিসংযোগের অভিযোগের বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণ করতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ এর ১৭ ধারা অনুযায়ী পুলিশ সুপার, ঠাকুরগাঁওকে বলা হয়েছে। আদেশের অনুলিপি সচিব, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে প্রেরণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, ঝিনাইদহের ঘটনায় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের বরাতে গৃহীত সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, ঝিনাইদহের মহেশপুরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমি দখল করে খেলার মাঠ বানানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিবাদে ও জমি ফেরত পেতে গত শনিবার সকালে ঝিনাইদহ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করে জানান, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া মহেশপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের হামিদপুর মৌজার দুই দাগের ১০৩ ও ১০৪ শতক জমির মালিক ভরত দাস ও ভাই শম্ভু দাস। শত বছর ধরে এই জমি চাষাবাদ করে আসছে তাদের পরিবার। কিন্তু ভুলক্রমে মাঠ জরিপের সময় জমি সরকারের খতিয়ানে রেকর্ড হলে মামলা করে তা জমি ফেরত পায়। তাদের জমিতে লাগানো ফসলও প্রভাবশালীরা কেটে জমি দখলের চেষ্টা করে। এ নিয়ে আদালতে মামলা করলে আদালত নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তা উপেক্ষা করে গত ৫ সেপ্টেম্বর পৌরসভার কাউন্সিলর বাবুল হোসেন আরও কয়েকজন সহযোগীসহ জমি দখল করে নেয় বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে কমিশনের সুয়োমটোতে উল্লেখ রয়েছে, বিজ্ঞ আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশ উপেক্ষা করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর জমি দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালী কর্তৃক খেলার মাঠ বানানোর অভিযোগটি অত্যন্ত নিন্দনীয়, মানবাধিকারের লঙ্ঘন ও আদালত অবমাননার শামিল। তাই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে সুপরিচিত এবং এদেশের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে ধর্মীয় সম্প্রীতি মেনে চলে। এদেশে দীর্ঘদিনের চর্চিত সহনশীলতার সংস্কৃতি বিনষ্ট করে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। এ ধরনের ঘটনা সংখ্যালঘুদের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করেছে এবং ঘটনাগুলো সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা প্রয়োজন বলে কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ মনে করেন।

এ অবস্থায়, ঝিনাইদহের মহেশপুরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর জমি দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালী কর্তৃক খেলার মাঠ বানানোর অভিযোগের বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন প্রেরণ করতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯ এর ১৭ ধারা অনুযায়ী ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারকে বলা হয়েছে। আদেশের অনুলিপি সচিব, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে প্রেরণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত