ঢাকা ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঝুটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষের শঙ্কা

ঝুটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষের শঙ্কা

নারায়ণগঞ্জে আলোচিত ৭ মার্ডারের ঘটনার পর থেকে দীর্ঘদিন ঝুটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এখানে আর কোন হানাহানির খবর পাওয়া যায়নি। কারণ পুরো গার্মেন্টস খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল আলোচিত-সমালোচিত সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও তার অনুসারীদের। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে হঠাৎ পাল্টে যায় দৃশ্যপট। অনেক ঝুট সন্ত্রাসী ভোল পাল্টে বনে যান বিএনপি নেতা। বিসিক শিল্পনগরীসহ নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্ট সেক্টরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য শুরু হয় শক্তি প্রদর্শণের মহড়া। এক পক্ষকে ঘায়েল করতে আরেক পক্ষ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন জেলা যুবদলের সদস্য সচিব রণি, তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী বরিশাইল্যা জাহাঙ্গির ও সিরাজ বাহিনী। এ ছাড়াও ফতুল্লার বাবুরাইল, আমবাগান, হোসাইনীনগর, বাংলাবাজার ও দেওয়ানবাড়ি এলাকায় ঝুটের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় ব্যস্ত অনিক মির্জার বাহিরী। এ ছাড়াও রয়েছে রাজু, মামুন, সোহেল, ফয়সাল ও ইমনের তেতৃত্বে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং। সম্প্রতি সবচয়ে বড় সংঘর্ষ হয়েছে ফতুল্লার পঞ্চবটী এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরীতে। সেখানে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব রণির বিরুদ্ধে তার ঘনিষ্ঠ কর্মী জাহাঙ্গির ও সিরাজের নেতৃত্বে দুই শতাধিক সন্ত্রাসী নিয়ে বিসিকের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রাসেল মাহমুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। এ সময় রাসেলের লোকজন বাধা দিতে গেলে দুই গ্রুপে ভয়াবহ সংখ্যা শুরু হয়। এ সময় রণি গ্রুপের সন্ত্রাসীরা রাসেলের ৪টি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাসেলের দুই কর্মীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাসেল মাহাম্মুদ জানিয়েছেন, তিনি ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব ও ফতুল্লা থানা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক। কোন রাজনৈতিক পারিচয়ে নয়, দীর্ঘদিন ধরেই বিসিকের বাসিন্দা হিসেবেই ব্যবসা করে আসছেন তিনি। বিসিকের ভিতরেই তার বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু হঠাৎ করে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় রণি বাহিনী। শুধু তাই নয়, ঝুটের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নিতে একটি গ্রুপ আমাকে সাবেক ছাত্রদল নেতা আনু হত্যা মামরায় প্রধান আসামি করে মামলা পর্যন্ত দিয়েছে। অথচ পুলিশ এবং চিতিৎসকরা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হয়নি এটি মৃত্য না হত্যা। এমতাবস্থায় আনুর মরদেহ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাসেলকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা দায়েরের ঘটনাকে দূরভিসন্ধিমূলক বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। এনায়েতনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগিরের বিরুদ্ধে ঝুট সন্ত্রাসী রণিকে পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু গণমাধ্যমকে দেয়া বক্তব্যে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অ্যাডভোকেট আলমগির। তার দাবি, গার্মেন্টস মালিকরা স্বেচ্ছায় তার লোকজনকে ঝুট দিচ্ছেন। এখানে কোনো ধরনের দখলবাজির ঘটনা ঘটছে না বলেও দাবি করেন এ বিএনপি নেতা। বিসিক ছাড়াও জেলখানার পিছরে অবস্থিত রপ্তানিমুখী বৃহৎ তৈরি পোশাক কারখানা ফকির গার্মেন্টস থেকেও সাড়ে ২৭ লাখ টাকার ঝুট বের করে আনার রশিদ পাওয়া গেছে। কিন্তু সংঘর্ষের খবর পেয়ে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বিপুল সংখ্যক বিজিবি ও র‌্যাব সদস্য পাঠান বিসিকে অভিযান চালাতে। মূলত এই র‌্যাব কর্মকর্তার তাৎক্ষণিক পদক্ষেপেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এড়ানো গেছে। এদিকে, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রাসেল মাহমুদ বলেন, আমার বাড়ি বিসিকের ভিতরে।এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে এখানকার গিার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে আমার সখ্যতা রয়েছে। তাই কোনো দলীয় পরিচয়ে নয়, বরং তাদের কাছে বিশ্বস্ততার কারণে এখানকার গার্মেন্টস মালিকদের সঙ্গে আমি ব্যবসা করে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করেই বিরিশাইল্যা জাহাঙ্গীর, রণি ও সিরাজের মতো কিছু ঝুট সন্ত্রাসী নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য এখানকার গার্মেন্ট সেক্টরকে অস্থির করে তোলার পায়তারা করছে। শুধু তাই নয়, তাদের পথ সুগম করার জন্য আমাকে একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। এরপর আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে এসব ঝুট সন্ত্রাসীরা আমাকে হয়রানি করে বিসিকে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ ব্যপারে বরিশাইল্যা জাহাঙ্গীর বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে দীর্ঘ এক যোগের বেশি সময় ঝুট সেক্টরে লুটপাট চলছে অবাধে। এখন আমরা এই সেক্টরে হাত দিতে না দিতেই সাংবাদিকরা তৎপর হয়ে ওঠেছে। আসলে আমার পিছনে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে ঝুট নিয়ে। ফতুল্লা থানার ওসি নূরে আযম মিয়া বলেন, সম্প্রতি বিসিকে ঝুট নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই গ্রুপই থানায় অভিযোগ করেছে। আমরা এসব অভিযোগ তদন্ত করে দেখছি। র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, তৈরি পোশাক খাত দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। যে কোনো মূল্যে ঝুট ব্যবসাকে কেন্দ্র করে হানাহানি বন্ধ করা হবে। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমই-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ঝুট নিয়ে গার্মেন্টস সেক্টরকে অস্থির করতে দেয়া হবে না। এখানে লাখ লাখ মানুষের জীবিকা জড়িত। দেশের একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব আসে এ খাত থেকে। বিভিন্ন গ্রুপের ফোন পাচ্ছি পাচ্ছি প্রতিদিন। সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছি। একই সঙ্গে সবাইকে বলেছি, মিলেমিশে কাজ করতে। বিশৃঙ্খলা করলে কাউকে গার্মেন্টসে ঢুকতে দেয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ দিকে বিশেষ নজর রাখছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত