হিজবুল্লাহর সঙ্গে ‘ব্যাপক সংঘাত’ নিয়ে নেতানিয়াহুর সতর্কতা
প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
অদূর ভবিষ্যতে ইসরায়েলকে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ‘বড় আকারের সংঘর্ষের’ মুখোমুখি হতে হবে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গত বৃহস্পতিবার একটি কৌশলগত আলোচনার সময় এ বিষয়ে নিরাপত্তা প্রধানদের সতর্ক করেছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশের উত্তরে এই সংঘর্ষ ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল এই খবর জানিয়েছে।
চ্যানেল ১৩ এর খবরে বলা হয়, নেতানিয়াহু মনে করেন, হিজবুল্লাহর সঙ্গে একটি অনিবার্য সর্বাত্মক সংঘর্ষের দিকে ধাবিত হচ্ছে ইসরায়েল। একটি কূটনৈতিক সমাধান যা লেবাননের সশস্ত্র এই গোষ্ঠীর সঙ্গে ইসরালের প্রায় প্রতিদিনের আন্তঃসীমান্ত সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে পারতো, তা অধরাই রয়ে গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতানিয়াহুর এক সহযোগির বরাতে চ্যানেল ১৩ জানায়, প্রত্যাশিত সংঘর্ষের জন্য কোনও সময়রেখা নির্ধারণ করা হয়নি। অবশ্য এর আগে, শীর্ষ কর্মকর্তারা কয়েক মাস ধরে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন থেকে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উত্তর সীমান্তে হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে হাজার হাজার ইসরায়েলি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। নিরাপত্তা প্রধানরা অবশ্য আগেই বলেছিলেন, এই সমস্যার কোনও কূটনৈতিক সমাধান হবে না। আন্তর্জাতিক বৈধতা এবং আইডিএফের অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই একটি সামরিক অভিযান শুরু করা উচিত বলে একমত হয়েছিলেন তারা।
চ্যানেল ১৩ আরো জানায়, নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উদ্বেগ, উত্তরে বিস্তৃত যুদ্ধের অর্থ গাজায় তাদের জনশক্তি ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়া। আর সে কারণেই উত্তরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে এমন কোনও পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যেতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। সম্প্রচারমাধ্যম কান শনিবার জানিয়েছে, নেতানিয়াহু মনে করেন, লেবাননে সর্বাত্মক যুদ্ধ করা হলে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের ওপর সামরিক চাপ বজায় রাখতে আইডিএফ-এর কোনো বেগ পেতে হবে না। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এ বিষয়ে নিশ্চিত নন। প্রতিবেদন অনুসারে, গ্যালান্ট দাবি করেছেন, আইডিএফ প্রকৃতপক্ষে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিতে প্রস্তুত। তবে এমনটি করা হলে গাজায় তাদের বাহিনীর উপস্থিতি হ্রাস পেতে পারে এবং জিম্মিদের মুক্ত করার সুযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ধারণা করা হয়, গাজায় এখনও ইসরায়েলের ১০১ জন জিম্মি জীবিত রয়েছেন। তবুও লেবাননে একটি যুদ্ধ পরিচালনায় আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে তেহরান দেশগুলোকে লবিং করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে কান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রকে এটি বোঝানোর চেষ্টা করবে যে, যুদ্ধ এড়াতে একটি কূটনৈতিক চুক্তিতে পৌঁছানোর সব প্রচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে তারা।
তবে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ইসরায়েল আরও অপেক্ষা করবে- অন্তত ৫ নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর পর্যন্ত- বলে আশা করছে ওয়াশিংটন। আর সেই লক্ষ্যে মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রদূত আমোস হোচস্টেইন একটি যুদ্ধ এড়াতে লেবাননের সঙ্গে প্রচেষ্টার বিষয়ে যে অগ্রগতি হয়েছে শিগগিরই তা উপস্থাপন করবেন। ইসরায়েলি ও বিদেশি সূত্রগুলো জানায়, বর্তমান উত্তেজনা ও প্রতিদিনের সংঘর্ষের সমাধানের জন্য করা সেই প্রচেষ্টাগুলো অপর্যাপ্ত ছিল। এদিকে, লেবাননে হিজবুল্লাহর সেকেন্ড-ইন-কমান্ড বা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা শনিবার সতর্ক করেছিলেন, একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু করে ইসরায়েল শুধু লেবানন সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় প্রায় এক লাখ মানুষকে তাদের বাড়ি ফিরিয়ে দিতেই ব্যর্থ হবে না, বরং আরও ‘হাজার হাজার মানুষকে’ বাস্তুচ্যুতও করবে। ইরান-সমর্থিত লেবানিজ সশস্ত্র গোষ্ঠীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা নাইম কাসেম গত সপ্তাহে গ্যালান্টের করা একটি মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
তখন ইসরায়েলি সেনাদের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘উত্তরে সম্ভাব্য যা কিছু ঘটতে পারে সেগুলোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে’ দেশটি। বৈরুতে একটি বক্তৃতায় কাসেম দাবি করেছিলেন, হিজবুল্লাহর ‘যুদ্ধে যাওয়ার কোনও ইচ্ছা নেই। কেননা, আমরা মনে করি এটি ফলপ্রসূ হবে না।’ তিনি বলছিলেন, ‘তবে, ইসরায়েল যদি একটি যুদ্ধ শুরু করে আমরা এর মুখোমুখি হবো-আর এতে উভয় পক্ষেরই বড় ক্ষতি হবে।’ তখন তিনি আরো বলছিলেন, ‘যদি তারা মনে করে থাকে এ ধরনের যুদ্ধ এক লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষকে তাদের ঘর ফিরিয়ে দেবে তবে, আমরা সতর্ক করছি: এতে আরও কয়েক হাজার বাস্তুচ্যুতকে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকুন।’ ৮ অক্টোবর থেকে হিজবুল্লাহর নেতৃত্বাধীন বাহিনী প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তে ইসরায়েলি সম্প্রদায় ও সামরিক চৌকিতে হামলা করছে। গোষ্ঠীটির দাবি, সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধে গাজাবাসীর সমর্থনে এই হামলা করছে তারা। গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হলেই শুধু সীমান্তের সংঘর্ষ বন্ধ হবে। এই সংঘর্ষের কারণে এপর্যন্ত ২৫ ইসরায়েলি বেসামরিক, ২০ আইডিএফ ও সংরক্ষিত সেনা নিহত হয়েছেন। সিরিয়া থেকেও বেশ কিছু হামলা হয়েছিল। তবে সেসব হামলায় কোনও হতাহত হয়নি। চলমান সংঘর্ষের সময় ইসরায়েলের হাতে হিজবুল্লাহর ৪৪০ সদস্য নিহত হয়েছেন। তাদের অধিকাংশেই লেবাননে নিহত হন। তবে কিছু সদস্য সিরিয়াতেও নিহত হয়েছেন। এ সময় অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর আরও ৭৮ সদস্য, এক লেবানিজ সেনা এবং কয়েক ডজন বেসামরিকও নিহত হন।