বিয়ের ফাঁদে ১২ বছর প্রতারণার শিকার গৃহবধূ
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
পুলিশ কনস্টেবল মো. খালেকুজ্জামানকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন কুড়িগ্রামের আফরুজা আক্তার। পরিচয়ের পর থেকেই দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। সে সম্পর্ক বিয়ে অবধি গড়ায়। এ পর্যন্ত সব ঠিক থাকলেও বিপত্তি ঘটতে থাকে বিয়ের পর থেকেই। আফরুজা আক্তারের বাবাও একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল।
বিয়ের বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেয়নি খালেকুজ্জামানের বড় ভাই মো. খায়রুল ইসলাম বাবলু। তিনি আওয়ামী লীগের কুড়িগ্রাম দুর্গাপুর ইউনিয়ন শাখার সভাপতি ছিলেন। ক্ষমতার দাপটে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন আফরুজা আক্তারের পরিবারকে। বিয়ের পর থেকেই নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে দুজনকে আলাদা করতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। এক পর্যায়ে ছোট ভাই খালেকুজ্জামানকে বদলি করিয়ে নেন। এরপর থেকেই খালেকুজ্জামান নিজে থেকেই যেন লাপাত্তা। নিজে থেকে সে আর আফরুজা আক্তারের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। কোনো খোঁজখবর না পেয়ে আফরুজা আক্তারের পরিবার কুড়িগ্রামের খালেকুজ্জামানের পরিবারে সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে বারবার নিগৃত হয়েছে। উল্টো তাদের পরিবারে নেমে আসে অসহনীয় চাপ। স্থানীয় ব্যক্তি বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো কিছুই যেন উপকারে আসেনি। বাধ্য হয়ে নিজ উদ্যোগে খুঁজে বেড়িয়েছেন স্বামী খালেকুজ্জামানকে। কয়েক বছর আগে শিল্প পুলিশ ইউনিট-২ টঙ্গী গিয়ে আবিষ্কার করেন খালেকুজ্জামানকে। তবে সেখানে খালেকুজ্জামান তাকে নানাভাবে অপমান অপদস্ত করে এবং শিল্প পুলিশ ইউনিট-২ টঙ্গী থেকে বের করে দেয়। সেখান থেকেও বদলি হয়ে আবারো নিরুদ্দেশ হন খালেকুজ্জামান। অতপর ১৪ সেপ্টেম্বর তাকে তেজগাঁও থানায় গিয়ে পাওয়া যায়। আফরোজা আক্তার থানায় গিয়ে তাকে হাতেনাতে ধরে ওসি তদন্ত সোহেল রানার কাছে গিয়ে বিচার চাইলে ওসি সাহেব খালেকুজ্জামানকে ডেকে পাঠালে খালেকুজ্জামান আফরুজা আক্তারকে চিনতে অস্বীকার করেন। ওসি তদন্ত সোহেল রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, যেহেতু খালেকুজ্জামান এখানে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত তার নিয়োগ উপ-পুলিশ কমিশনার (পরিবহন) থেকে জারিকৃত। তাই তার বিষয়ক যে কোনো সিদ্ধান্ত সেখান থেকেই হবে। আমরা ভুক্তভোগীকে সে বরাবর আবেদন করতে বলেছি। এ ব্যাপারে উপ-পুলিশ কমিশনার (পরিবহন) মোহাম্মদ মনজুর আহমেদ সিদ্দিকী বরাবর অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। ভুক্তভোগী আফরুজা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অঝোরে কাঁদতে থাকেন এবং বলেন, বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন এ বন্ধনে আবদ্ধ একটা মানুষ কীভাবে লাপাত্তা হয়ে যায় তা নিজের জীবন দিয়ে দেখলাম এই ১২ বছর। আর এই ১২ বছর তাদের ভাইদের অত্যাচারে আমরা আমাদের বাড়িতে ঠিকমতো ঘুমাতেও পারিনি, ন্যায্যবিচার পাওয়া তো দূরের বিষয়। আজ সময় হয়েছে আমজনতার ন্যায্যবিচার পাওয়ার। তাই আমি পুলিশ প্রশাসনের কাছে একজন অপরাধী পুলিশের বিচার চাইছি। এই ১২ বছর পুলিশ কনস্টেবল খালেকুজ্জামান কেন আমাকে বৈবাহিক জীবন থেকে বঞ্চিত করলো? এ ধরনের অপরাধীদের গায়ে পুলিশের পোশাক মানায় না। অভিযোগকারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কনস্টেবল (ড্রাইভার) মো. খালেকুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ছিল। একদিন তাদের বাসায় (কুড়িগ্রাম) গেলে তাদের পরিবারের লোকজন জোর করে আমাদের বিয়ে পড়িয়ে দেয়। সে বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে আমি ট্রান্সফার নিয়ে আসি। পরবর্তীতে ডিভোর্স কেন দেননি জানতে চাইলে সদুত্তর দিতে পারেননি।