পোশাক শিল্পখাতে বিদ্যমান অস্থিরতা ও সমস্যা নিরসনে সরকারের কাছে ১৮টি দাবি উত্থাপন করে শ্রমিক পক্ষ। তাদের এসব দফার মধ্যে মজুরি এবং বছর শেষে ১০ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানোর দাবি কোনো ভাবেই না মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজিএমইএ। গাজীপুর ও আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক অসন্তোষের মধ্যে গত সোমবার সন্ধ্যায় সংগঠনের উত্তরা কার্যালয়ে ‘বিশেষ সাধারণ সভায়’ এমন সিদ্ধান্ত নেয় সংগঠনটি। বর্তমান পরিস্থিতিতে শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সদস্যদের মতামত জানতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ এ সভা ডাকে। বিশেষ সভায় নেয়া সিদ্ধান্তটি গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য শ্রম মন্ত্রণালয়ে সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের চার উপদেষ্টাকে জানাবে রপ্তানি খাতের সংগঠনটি। বিজিএমইএ সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, সভায় উপস্থিত সদস্যরা একমত হয়েছেন নতুন করে মজুরি বৃদ্ধি ও বছর শেষে ১০ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট দেয়া নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হবে না। তার অভিযোগ, শ্রমিকদের নামে বিভিন্ন ফেডারেশন ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত ১৮ দফা দাবি তুলেছে।
১. মজুরি বোর্ড পুনর্গঠনপূর্বক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নিধারণ। ২. যে সব কারখানায় ২০২৩ সালে সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি ও এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি তা দ্রুত বাস্তবায়ন। ৩. শ্রম আইন সংশোধন করতে হবে। ৪. কোনো শ্রমিকের চাকরি ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর চাকরি থেকে অব্যাহতি দিলে/চাকরিচ্যুত হলে একটি বেসিকের সমান অর্থ প্রদান করতে হবে, এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক শ্রম আইনের ২৭ ধারাসহ অন্যান্য ধারাসমূহ সংশোধন। ৫. সব প্রকার বকেয়া মজুরি অবিলম্বে পরিশোধ। ৬. হাজিরা বোনাস (২২৫ টাকা), টিফিন বিল (৫০ টাকা), নাইট বিল (১০০ টাকা) সব কারখানায় সমান হারে বাড়াতে হবে। ৭. সব কারখানায় প্রভিডেন্ড ফান্ড ব্যবস্থা চালু। ৮. বেতনের বিপরীতে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ন্যূনতম ১০ শতাংশ করা। ৯. শ্রমিকদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা চালু। ১০. বিজিএমইএ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত বায়োমেট্রিক ব্ল্যাকলিস্টিং করা যাবে না; বায়োমেট্রিক তালিকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। (বায়োমেট্রিক হল আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে কারখানায় প্রবেশাধিকার। আঙ্গুলের ছাপ গ্রহণ না করলে কারখানায় প্রবেশ করতে পারেন না কর্মীরা।) ১১. সব প্রকার হয়রানিমূলক এবং রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার। ১২. ঝুট ব্যবসার আধিপত্য বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ। ১৩. কলকারখানায় বৈষম্যবিহীন নিয়োগ প্রদান করতে হবে (নারী-পুরুষ সমান হারে নিয়োগ)। ১৪. জুলাই বিপ্লবে ‘শহীদ’ এবং আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত। ১৫. রানা প্লাজা এবং তাজরীন ফ্যাশন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে তদন্তান্তে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ। ১৬. শ্রম আইন অনুযায়ী সব কারখানায় ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন। ১৭. অন্যায্যভাবে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ। ১৮. নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ১২০ দিন নির্ধারণ।
‘দাবিগুলো শ্রমিকদের নয়’ এদিকে শ্রমিকদের নামে দেয়া দাবিগুলো কোনো শ্রমিকদের নয় জানিয়ে প্যাট্রিয়ট গ্রুপের ইমরান বলেন, গত ডিসেম্বরে নতুন মজুরি হার বাস্তবায়ন করেছি। নতুন বেতন, বোনাস চালু করেছি। সরকার বদল হওয়ায় ৯ মাস পরে কেনো এখন আবার কেনো মজুরি হার বাড়ানো হবে। ‘এখন কেনো নতুন দাবি উঠেছে আমাদের বিপদে ফেলানোর জন্য। হাজিরা বেতন ও মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়ার যায়। কালো ছায়া দেখতে পাচ্ছি গার্মেন্টস খাতে। গার্মেন্টস যদি ধ্বংস হয় তাহলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।’ বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রেদওয়ান আহমেদ বলেন, সমস্যাটি শুরু হয়েছিল নাসা গ্রুপ থেকে। গ্রুপটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে, মহা ডাকাতি করে ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদে। এখন তিনি বিদেশে বা গোপনে আছেন, কই আছেন তা জানি না। ‘শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে শ্রম অসন্তোষ করছেন। সমস্যা তো সামলানো গেছিল, শুরুতেই ওখানে হাত দিলে এত বড় হতো না। এখন নজরুলরা কোটি কোটি টাকা ঢালছেন শ্রমিকদের পেছনে ভাঙচুর করতে, কারখানা বন্ধ করতে। সরকার ও শিল্পকে ধ্বংস করতে।’