বন্দর নগরী চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে মেগা প্রকল্প মেট্রোরেল নির্মাণের সার্ভে। এ সার্ভে সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুরু হয়ে চলবে ডিসেম্বর পর্যন্ত। মেট্রোরেল নির্মাণের বিভিন্ন বিষয়ে ট্রাফিক ও ট্রান্সপোর্ট সম্পর্কিত সার্ভে করা হবে। সার্ভের বিষয়বস্তু হলো, বর্তমানে সড়কগুলোতে কোন কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করে, কোন শ্রেণির মানুষ কোন সড়কে বা কোন যানবাহনে চলাচল করে কিংবা বিভিন্ন সড়কের পরিসংখ্যানসহ মোট ১৩ ধরনের সার্ভে করা হবে। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন ট্রান্সপোর্ট প্রফেশনাল অ্যালায়েন্স (টিপিএ) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. নুরুল হাসান। টিপিএ নগরীর মেট্রোরেলের সার্ভের কাজ করছে। ট্রান্সপোর্ট প্রফেশনাল অ্যালায়েন্স (টিপিএ) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. নুরুল হাসান।
তিনি জানান, টিপিএ নগরীর মেট্রোরেলের সার্ভের কাজ করছে। কালুরঘাট থেকে বিমানবন্দর, সিটি গেট থেকে শহীদ বশিরুজ্জামান চত্বর এবং অক্সিজেন থেকে ফিরিঙ্গী বাজার হয়ে পাঁচলাইশ-একেখান মোড়। এই তিনটি রুটকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়। তিনটি রুটের ৫০ কিলোমিটারের মেট্রোরেলের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রী উঠানামার জন্য মোট ৪৭টি পয়েন্ট থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ দ্রুত করতে উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের নিয়ে গত ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) সম্মেলন কক্ষে একটি সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, নগরীর অভ্যন্তরে বা মূল শহরে মাটির নিচে এবং শহরের আশপাশে মাটির উপরে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্দেশ্য নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।
সরকার ও কোরিয়া আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থার অর্থায়নে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে জানুয়ারি ২০২৩ থেকে জুন ২০২৫ পর্যন্ত। ট্রান্সপোর্ট প্রফেশনাল অ্যালায়েন্স (টিপিএ) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মো. নুরুল হাসান জানান, আমাদের টিম সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে কাজ করেছে। আমরা আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের সার্ভের কাজ শেষ হবে। আমরা মূলত ১৩ ধরনের সার্ভে করবো। যানবাহন, যোগাযোগব্যবস্থা এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত বিষয়ের উপর প্রশ্ন থাকবে। এছাড়া, যাত্রী ও পথচারীদের যাত্রার উদ্দেশ্য, সময়, ব্যয় ইত্যাদি বিষয় থাকবে। মেট্রোরেল নির্মাণে ট্রাফিক ও ট্রান্সপোর্ট সম্পর্কিত যে ১৩ ধরনের সার্ভে করা হবে-
সড়কের সমীক্ষা (রোডের ইনভেনটরি) : সড়কটি কতটুকু চউড়া, কয়টা লিংক রয়েছে, পাশে পার্কিং রয়েছে কি না, অবৈধ পার্কিং রয়েছে কি না, কতটুকু ফুটপাত রয়েছে, সড়কটি আবাসিক নাকি বাণিজ্যিক এলাকার পাশে। ইনভেনটরি জরিপে এই তথ্য যাচাই-বাছাই করা হবে।
বাসা-বাড়ির ইন্টারভিউ (হাউসহোল্ড ইন্টারভিউ সার্ভে) : চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আওতাধীন এলাকায় এই হাউসহোল্ড সার্ভে করা হবে। প্রায় ১৪ হাজার বাসায় গিয়ে গিয়ে সার্ভেয়াররা ইন্টারভিউ করবে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্ট। তারা মূলত কীভাবে যাতায়াত করে এবং কোন কোন পরিবহন ব্যবহার করে তা জানার জন্যই এই সার্ভে।
যানবাহনের সংখ্যা (ট্রাফিক ভলিউম কাউন্ট) : সড়কের একটি লোকেশনে কোন কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করে এবং কোনো যানবাহনটি ওই এলাকায় কী পরিমাণ চলাচল করে তা জানার জন্যই এই ট্রাফিক ভলিউম কাউন্ট সার্ভে। সে সাথে ওই সড়কে পথচারী কেমন চলাচল করে তাও কাউন্ট করা হবে। নগরীর ৫২টি পয়েন্টে এই সার্ভে করা হবে।
যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসা (রোড সাইড ইন্টারভিউ) : ২৭টি পয়েন্টে যানবাহন থামিয়ে তাদের জিজ্ঞেস করা হবে, তারা কোথায় থেকে যাত্রা শুরু করেছে এবং কোথায় গিয়ে থামবে। প্রতিটি গাড়িতে কতজন যাত্রী রয়েছে তাও কাউন্ট করা হবে। ট্রাক থেকে শুরু করে সব ধরনের যানবাহনকে এই ইন্টারভিউ’র আওতায় আনা হবে।
পথচারীর সংখ্যা (পেডিস্ট্রেয়ান ভলিউম) : নগরীর ৪২টি পয়েন্টে এই সার্ভে করা হবে। কী পরিমাণ পথচারী রাস্তা পারাপার হচ্ছে তা জানা যাবে।
আলাদা আলাদা পছন্দ (স্টেটেড প্রেফারেন্স) : ভ্রমণের উদ্দেশ্য, কোথায় যাচ্ছে এবং কোথা থেকে যাচ্ছে, নতুন যানবাহনে চলার ইচ্ছেপোষণ করবে কি না এবং নতুন ভ্রমণের অতিরিক্ত অর্থ খরচের ইচ্ছে আছে কি না এসব তথ্য এই সার্ভের মাধ্যমে নেয়া হবে।