অর্থের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সীমান্ত পার

আহ্বায়ক আবুকে নিয়ে বিব্রত কুমিল্লা বিএনপি

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কুমিল্লা প্রতিনিধি

টাকার বিনিময়ে সীমান্ত দিয়ে নিরাপদে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভারতে পালানোর সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উদরাতুল বারী আবুর বিরুদ্ধে। শুধু কুমিল্লার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাই নয়, পার্শ্ববর্তী ফেনী, লক্ষ্মীপুর এবং নারায়ণগঞ্জেরও বেশ কিছু আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতাদের কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালাতে সহায়তা করেছেন বাবু। বিনিময়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

কুমিল্লা মহানগর বিএনপির একটি অংশ অভিযোগ করেছে, সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট বিকাল থেকেই কুমিল্লার আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নগদ টাকা, চেক আর শেয়ার লিখে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য নিজের নামে করে নেন এই আবু। এছাড়াও আওয়মী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাদের মামলা থেকে বাঁচানো, পুলিশি হয়রানি থেকে রক্ষার নামেও বাণিজ্য করেছেন এই বিএনপি নেতা। তাদের কাছ থেকেও বিপুল টাকা নিয়েছেন। আর যারা নগত টাকা দিতে পারেননি তাদের কাছ থেকে স্বর্ণ নিয়েছেন।

এদিকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে কুমিল্লা শহরের প্রতিটি ফুটপাত, বাসস্ট্যান্ড, বেবিস্ট্যান্ড, রেলস্টেশনের দখলের পাশাপাশি আঞ্চলিক সরকারি প্রতিটি অফিসের দখল নিয়েছে বাবু ও তার অনুসারীরা। বাবুর দখলের থাবা থেকে রেহাই পায়নি মসজিদের জায়গাও। স্থানীয় লোকজন বলছে, শহরজুড়ে আবুর বেপরোয়া দখলদারিত্বে সবার মাঝে এটাই মনে করিয়ে দিয়েছে, কুমিল্লা শহরে আবুর কথাই শেষ কথা- ভয়ে কেউই মুখ খুলছে না। আর যারাই এসবের প্রতিবাদ করছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া আর পুলিশি হয়রানির মাধ্যমে ঘর ছাড়তে বাধ্য করছে উদরাতুল বারী আবু। কর্পোরেশনের অসমাপ্ত কাজ, টেন্ডার আর ঠিকাদারির একক কতৃত্ব আবুর কাছে। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দৈনিক ১০০টি বই বরাদ্দ আবুর নামে। এলজিইডি অফিস, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের যে কোনো কাজে এখন আবুর নির্দেশ ছাড়া হচ্ছে না। শাসনগাছা, জাঙ্গালিয়া, পদুয়ার বাজার বাস টার্র্মিনাল আবুর মদদে তার সহযোগিরা দখল করে নিয়েছে। শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ আবুর অনুসারী কোতোয়ালি থানা বিএনপির আহ্বায়ক রেজাউল কাইয়ুম, জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনালের নিয়ন্ত্রণ মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব। পদুয়ার বাজার টার্মিনালের দায়িত্ব ২২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব মিজান, সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সায়েম ও যুবদল নেতা খোকা। নগর পরিবহন দখল করে পরিচালনা করছে আবুর সহেযাগী যুবদল নেতা ভুট্টু। এমনকি মালিক সমিতি ও বিআরটিএর অনুমোদন ছাড়া নতুন পরিবহন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। কয়েকটি পরিবহন সার্ভিসের মালিকানার শেয়ার উদরাতুল বারী আবু নিজের ও তার অনুসারীদের নামে জোর করে লিখে নিয়েছে। এছাড়াও কুমিল্লা শহরে গত ৩০ বছরের রামঘাটলা মসজিদের তত্ত্বাবধানে থাকা বেবিস্ট্যান্ড উঠিয়ে দিয়েছে আবুর সহেযাগী মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক পাবেল। সেখানে রাতারাতি মার্কেট তৈরি করা হয়েছে। উদরাতুল বারী আবুর দখলদারিত্বে মহানগরজুড়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

নাম না প্রকাশের শর্তে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির এক নেতা বলেন, গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বেপোরয়া হয়ে উঠেছে আবু। সে কাউকেই তোয়াক্কা করছে না।

টাকার বিনিময়ে একাধিক আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের তিনি ভারতে সেইফ এক্রিট দিয়েছেন। চাঁদাবাজি, দখলদারি কী করছে না। তাকে নিয়ে পুরো কুমিল্লা বিএনপি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। আমাদের সব অর্জনকে তিনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। বিএনপি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই। এসব অভিযোগের বিষয়ে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উদরাতুল বারী আবুর মোবাইল ও হোয়াটসআপ নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও, তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।