শেখ হাসিনা সরকারের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সীমিত হতে থাকে। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে পাকিস্তান থেকে আমদানি করা অধিকাংশ পণ্য ‘রেড লেন’ বা লাল তালিকাযুক্ত করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শেখ হাসিনার পতনের এক মাস ২৩ দিন পর লাল তালিকামুক্ত হলো পাকিস্তানের সব পণ্য।
এ সম্পর্কে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দ্বিতীয় সচিব মো. আবদুল কাইয়ুম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পাকিস্তান থেকে আগত সব ধরনের পণ্য অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড পদ্ধতির ‘রেড লেন’ থেকে অবমুক্ত করা হয়েছে। শুধু পাকিস্তানের পণ্য ‘রেড লেন’-এ ছিল। ন্যাশনাল সিলেক্টিভিটি ক্রাইটেরিয়া পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় পণ্যগুলোকে ‘রেড লেন’ থেকে অবমুক্ত করা হয়েছে। এনবিআর’র আদেশে বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্যসহ নিষিদ্ধ পণ্যে কঠোরতা রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ও পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে সহজ পদ্ধতির পথে হাঁটছে এনবিআর। এতে করে দেশে উৎপাদনমুখী পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে কোনো রকম জটিলতা থাকবে না। পাকিস্তান থেকে আগত সব পণ্যের চালান ন্যাশনাল সিলেকটিভ ক্রাইটেরিয়া কর্তৃক শতভাগ কায়িক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হচ্ছে। ফলে রেড লেন থেকে অবমুক্তকরণে অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডেপুটি কমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অধিক সময় ব্যয় হচ্ছে। তাছাড়া কায়িক পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না বিধায় ঢাকা কাস্টমস হাউজকে ন্যাশনাল ক্রাইটেরিয়া থেকে বহির্ভূত রাখার জন্য বলা হয়েছে। পাকিস্তান থেকে আগত সব ধরনের পণ্য চালান ন্যাশনাল ক্রাইটেরিয়া বহির্ভূত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তাছাড়া লোকাল ক্রাইটেরিয়ার আওতায় সময়ে সময়ে ঝুঁকি বিবেচনায় ওই দেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যভিত্তিক রিস্ক ম্যানেজমেন্ট চালু রাখার বিষয়ে কাস্টমস হাউজগুলো প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে- বলা হয় এনবিআর নির্দেশনায়। হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় পাকিস্তান। বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা দেখা করেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ আহমেদ মারুফ। গত ১০ সেপ্টেম্বর অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখা করেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে ঝিমিয়ে পড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরালো করার আহ্বান জানান। ওই সময় সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কারণে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য স্তিমিত হয়ে পড়ে। পাকিস্তান এখন আবার বাণিজ্য শুরু করতে আগ্রহী। এরপরই এনবিআর থেকে এ ধরনের নির্দেশনা এলো। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বাংলাদেশে পাকিস্তানি পণ্য লাল তালিকাভুক্ত হলেও পাকিস্তানের জুস, কাপড়, শিশুখাদ্য, ফ্যানসহ বিভিন্ন রকমের পণ্যের বড় বাজার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাকিস্তানের পণ্য লাল তালিকামুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এসব পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হবে। তুলার মতো কাঁচামালের বিকল্প বাজার তৈরি হবে।