মেট্রোরেল

শেখ হাসিনার ‘অজানা সময়’ ৩৭ দিনে শেষ করেছেন ড. ইউনূস!

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির মধ্যে গত ১৮ জুলাই জননিরাপত্তার আশঙ্কায় মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে তৎকালীন কর্তৃপক্ষ। পরদিন মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এরপরই দীর্ঘ সময়ের জন্য অনিশ্চিত হয়ে যায় মেট্রোরেল চলাচল।

পরে ২৫ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন পরিদর্শন শেষে বলেন, আজ মেট্রোরেল বন্ধ। কারণ, এই স্টেশনে যা যা নষ্ট হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক সিস্টেম, সম্পূর্ণ মডার্ন। এটা কতদিনে ঠিক হবে আমি জানি না। এর ঠিক দুদিন পরে ২৭ জুলাই বনানীতে ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ভবন পরিদর্শন শেষে তৎকালীন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মেট্রোরেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন ধ্বংসপ্রাপ্ত। এটা এক বছরেও যন্ত্রপাতি এনে সচল করা সম্ভব হবে না বলে এক্সপার্টরা জানিয়েছেন।

সেই সময়ের সরকার প্রধান ও সড়ক মন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর দ্রুত মেট্রোরেল চালু হবে— এমন আশা ফিকে হয়ে যায় মেট্রোরেল ব্যবহারকারী ও দেশবাসীর কাছে। এরপর কাটে অপেক্ষার পালা। ছাত্রজনতার গণঅভ্যুথানের মুখে গত ৫ আগস্ট দুপুরে পালিয়ে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর তিনদিন পর ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে। এরপর থেকেই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় রয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আওতায়। গত ১১ আগস্ট সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী মেট্রোরেলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চান প্রধান উপদেষ্টার কাছে। ওই রাতে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মেট্রোরেল চালু করার প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। তবে, ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ স্টেশন বন্ধ থাকবে।

কিন্তু এর মধ্যে ৮ আগস্ট বাধে বিপত্তি। সেদিন অবিচার ও বৈষম্য দূরীকরণে ছয় দফা দাবি আদায়ে সর্বাত্মক কর্মবিরতির ঘোষণা দেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ৭ শতাধিকেরও অধিক কর্মচারী। ফলে ঘোষণা অনুযায়ী— ১৭ আগস্ট মেট্রোরেল চালুর কথা থাকলেও সেটি চালাতে পারেনি ডিএমটিসিএল। পরে দাবি মেনে নেয়া হলে ২০ আগস্ট থেকে কাজে যুক্ত হন কর্মীরা। ৩৭ দিন বন্ধ থাকার পর সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ২৫ আগস্ট চালু হয় দেশের প্রথম বিদ্যুৎ চালিত দ্রুতগতির গণপরিবহন মেট্রোরেল। তবে বন্ধ রাখা হয় মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া মেট্রোরেল স্টেশন।

পরে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেয়া মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, ভাঙচুর ঠেকাতে মেট্রোরেলকে জরুরি সেবা (কেপিআই) হিসেবে ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

৯ সেপ্টেম্বর ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে আসে রদবদল। ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদে থাকা এমএএন ছিদ্দিকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। পরে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আব্দুর রউফকে।

দায়িত্ব নেয়ার পর উপদেষ্টার নির্দেশে বন্ধ থাকা মেট্রো স্টেশন দুটি চালুর বিষয়ে কাজ শুরু করেন মোহাম্মদ আব্দুর রউফ। এরপর ১৫ সেপ্টেম্বর ডিএমটিসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কাজীপাড়া স্টেশন পরিদর্শন করেন। তারা স্টেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম ঘুরে দেখেন। সেসময় পরিদর্শন টিমে থাকা এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছিলেন, কাজীপাড়া স্টেশন চালুর বিষয়ে আমরা সব পক্ষের ক্লিয়ারেন্স পেয়েছি। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর কাজীপাড়া স্টেশন চালু হবে। বন্ধের ১ মাস ২৪ দিন পর ২০ সেপ্টেম্বর কাজীপাড়া স্টেশনে থামে মেট্রোরেল। এর মধ্য দিয়ে সাবেক সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সেই ‘বচন’ ভুল প্রমাণিত হয়। একই দিন থেকে শুক্রবারও চালু হয় মেট্রোরেল সুবিধা। তবে মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন এখনো চালু করা যায়নি। এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আব্দুর রউফ বলেছিলেন, নষ্ট হওয়া যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করার কারণে সংস্কার কাজ করতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। তবে আগে যেমন এক বছরের কথা বলা হয়েছিল, এত সময় প্রয়োজন হবে না। তার অর্ধেক সময়ের মধ্যেই আশা করি স্টেশন খুলে দিতে পারব। ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা যায়, চলতি অক্টোবর থেকে মিরপুর-১০ স্টেশনটি চালু হতে পারে। স্টেশনটি চালু করতে খরচও হবে খুব কম।