দেশব্যাপী বহুল আলোচিত কুমিল্লায় মণ্ডপকাণ্ডের ৩ বছরেও ১১টি মামলার বিচারকার্য শুরু হয়নি। ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লা নগরীর নানুয়াদীঘির উত্তর পাড়ের একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নগরীর কয়েকটি মন্দির-মণ্ডপে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায়। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে ঘটনার ৮ দিন পর কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার হন ইকবাল। এ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ধর্ম অবমাননা ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মোট ৩৯টি মামলা হয়। এদিকে ৩৯ মামলায় হাজিরা দিতে ইকবাল কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন কারাগারে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি নোয়াখালী কারাগারে আছেন। তিনি কুমিল্লা নগরীর দ্বিতীয় মুরাদপুর এলাকার নূর আহমদ আলমের ছেলে।
জানা গেছে, মণ্ডপকাণ্ডে সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনায় ইকবালের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় ৮টি, সদর দক্ষিণ মডেল থানায় ২টি এবং দেবীদ্বার ও দাউদকান্দি মডেল থানায় ১টি করে সর্বমোট ১২টি মামলা হয়। এর মধ্যে দেবীদ্বার থানায় দায়ের করা মামলার অভিযোগ প্রমাণীত না হওয়ায় আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দেয় পিবিআই। ২০২২ ও ২০২৩ সালে আদালতে ১১টি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। এর মধ্যে সিআইডি ৬টি, পিবিআই ৩টি ও কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ ২টি মামলার চার্জশিট দেয়। ১১টি মামলায় মোট আসামি ২৫৫ জন। সিআইডি কুমিল্লার পরিদর্শক মো. নুরুল হাকিম বলেন, সিআইডির ৬ মামলায় মোট ১০৯ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) শিবেন বিশ্বাস বলেন, ২টি মামলায় আলোচিত ইকবালসহ ১০৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এদিকে ঘটনার দিন নগরীর মনোহরপুর এলাকায় বহিরাগত লোকজনের ইটের আঘাতে আহত হয়ে দিলীপ কুমার দাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ অক্টোবর রাতে ঢাকা মেডিকেলে মারা যান। এ ঘটনায় তার স্ত্রী রূপা দাস বাদী হয়ে ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলার ৫ নম্বর তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই কুমিল্লার পরিদর্শক মো. তৌহিদ বলেন, এ হত্যা মামলায় ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। এটিসহ ৩টি মামলায় ৩৮ জনের বিরুদ্ধে পিবিআই আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে।
এদিকে কুমিল্লার ঘটনার পর ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর গাজীপুরের রোকন নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। এ ঘটনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গাজীপুরের টঙ্গী থানায় মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় রোকনের সঙ্গে ইকবালকে আসামি করে চার্জশিট দেন টঙ্গী থানার এসআই অহিদ মিয়া। ২০২২ সালের ২৯ জুন অভিযোগ গঠনের পর দুই জনের বিচার শুরু হয় ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে। ২০২৩ সালের ২ মার্চ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াতের কাছে ইকবাল দোষ স্বীকার করেন। এরপর বিচারক গ্রেপ্তারের পর থেকে এ পর্যন্ত ইকবালের কারাভোগকেই সাজা হিসেবে রায় দেন। সে হিসেবে তার এক বছর চার মাস সাজা হয়।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল সাংবাদিকদের বলেন, কারাগারে থাকা নথি অনুসারে ইকবালের বিরুদ্ধে কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ৩৯টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার হাজিরার প্রয়োজনে তাকে বিভিন্ন সময়ে এক কারাগার থেকে অন্য কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি নোয়াখালী কারাগারে আছেন। কুমিল্লার আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মো. জহিরুল ইসলাম সেলিম বলেন, মামলার চার্জ গঠন থেকে বিচার প্রক্রিয়ায় কিছু নিয়ম আছে, আসামি গ্রেফতারও একটি ধাপ। মামলাগুলোর বিচার কাজ শেষ হতে আরো সময় লাগবে বলে মনে হচ্ছে।