তেজগাঁও মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয় হতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বরাবর গত ৯ অক্টোবর একটি নির্দেশনা পত্র পাঠানো হয়। যার স্মারক নং ০০.০১.০০০০.১০৯.৩৭.০০১.২৩.১৬২৪ এবং ফলাফল দুদককে অবহিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়। এর মধ্যেই অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত ও আইনিব্যবস্থা গ্রহণের শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্ত কমিটি কোনো কারণে বাতিল হয়। পরবর্তীতে গত ১৫ অক্টোবর মাউশি পুনরায় ওই অধিদপ্তরের তিনজন কর্মকর্তাকে নিয়ে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সরজমিনে তদন্তপূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়।
তেজগাঁও মহিলা কলেজের তিন শতাধিক ছাত্রী গত ২ সেপ্টেম্বর দিনভর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ এবং অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে রাখে। তারা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ভর্তি ও ফরম পূরণের সময় রশিদবিহীন টাকা আদায় ও তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ মোট ১৫টি অভিযোগ তুলে ধরে। পরে তেজগাঁও থানা-পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে অধ্যক্ষকে উদ্ধার করেন। পরের দিন অত্র কলেজের বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুসারে দুদকসহ কলেজ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ পেশ করে। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের চিঠি প্রেরণ করা হয়।
এই বিষয়ে অত্র কলেজের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের কাছ থেকে জানা যায় যে শিক্ষকদের পক্ষ থেকেও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ সংবলিত একটি আবেদনে কলেজের বিশজন নিয়মিত শিক্ষক স্বাক্ষর করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দিয়েছেন।
তারা জানান, দুর্নীতিবাজ মোহাম্মাদ নজরুল ইসলাম ২০১৮ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাবার পর থেকেই নানা রকমের দুর্নীতি ও অনিয়ম করে আসছেন। গত ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গণহত্যাকারী আসাদুজ্জামান খান কামালের সহায়তায় নানারকম রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনা ও আর্থিক দুর্নীতি করে অত্র কলেজে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন অধ্যক্ষ নজরুল।
স্বজন প্রীতি ও আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তার নিজ জেলা কিশোরগঞ্জ থেকেই প্রায় সকল কর্মচারীকে নিয়োগ দিয়ে কলেজে তার অবস্থানকে দৃঢ় করে রেখেছেন।
শিক্ষকগণ আরো অভিযোগ করেন, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে যোগ্যতার চেয়ে উচ্চতর পদমর্যাদা ব্যবহার করেন এবং সে অনুযায়ী অতিরিক্ত এবং বিধিবহির্ভূত বেতন ভাতা গ্রহণ করে আসছেন। কলেজের গাড়ি কলেজের কাজে ব্যবহার না করে তার পারিবারিক ও ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করে আসছেন এবং ২ জন ড্রাইভারের বেতন অবৈধভাবে কলেজের তহবিল থেকে দিয়ে আসছেন। অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ঘঞজঈঅ থেকে সুপারিশপ্রাপ্ত আবু হানিফ নামের একজন ডেমনস্ট্রেটর যার সুপারিশ ঘঞজঈঅ নিজেই বাতিল করা সত্ত্বেও তাকে কলেজের নিয়মিত প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেন এবং তাকে অবৈধভাবে কলেজের কল্যাণ তহবিলে অন্তর্ভুক্ত করেন। এমনকি বিধি বহির্ভূতভাবে আবু হানিফকে বোর্ডের বহিঃপরীক্ষক নিযুক্ত করে গুরুতর অসাধাচরণ করেছেন। কলেজের শিক্ষকদের বসার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা সত্ত্বেও অধ্যক্ষ একাই দুটি কক্ষ ব্যবহার করেন যার একটিতে তিনি তার ব্যক্তিগত জমি কেনা-বেচা ও ফ্ল্যাট ব্যবসা পরিচালনা করেন।