ঢাকা ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জামায়াতের নিবন্ধন

কোর্টের দিকে চেয়ে আছে ইসি নির্দেশনা পেলে দ্রুত পালন করবে

কোর্টের দিকে চেয়ে আছে ইসি নির্দেশনা পেলে দ্রুত পালন করবে

রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতে ইসলামীর যে আপিল আবেদন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ এক বছর আগে খারিজ করে দিয়েছিল, তা পুনরুজ্জীবিত করার আদেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। এখন যে কোনো দিন কোর্ট থেকে নিবন্ধন ফিরে পেতে নির্দেশনা আসলে দ্রুত তা পালন করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসি সূত্র জানায়, বর্তমানে ইসির ওয়েব সাইটে নিবন্ধিত দল রয়েছে ৪৭টি। আগে নিষিদ্ধ থাকায় এ তালিকায় জামায়াতের নাম নেই। নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে কোর্ট থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর, ইসি যাবতীয় কার্যক্রম শেষ করে জামায়াতের নাম ওয়েব সাইটে উঠাবে। জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী শিশির মনির বলেন, আপিল ‘রেস্টোর’ (পুনর্বহাল) হয়েছে। এরপর আপিল শুনানি হবে। শুনানির জন্য আবার লিস্টে (কার্যতালিকা) আসবে।

জানা যায়, জামায়াতকে নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তরীকত ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির মহাসচিব মুন্সি আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে একটি রিট আবেদন করেন। ২০১৩ সালের ১ অগাস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের বেঞ্চ ওই রিটের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে। ওই রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে জামায়াতের করা আবেদন ওই বছরের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন। তাতে এ দলটির দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে জামায়াতে ইসলামী আপিল করে। শুনানিতে জামায়াতের মূল আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ ওই আপিল খারিজ করে দেয়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তনের হাওয়ায় সেই আপিল পুনরুজ্জীবনের আবেদন করা হয় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতার অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর জাময়াতের আবেদনে সেই নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেয়া হয়। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও জিয়াউর রহমানের সরকার আবার জামায়াতকে রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ করে দেয়। সেই সুযোগে গোলাম আযম ১৯৭৮ সালে দেশে ফিরে দলের আমিরের দায়িত্ব নেন। সামরিক শাসক এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত ১৮টি আসন পায় এবং সরকার গঠনে বিএনপিকে সমর্থন দেয়। এরপর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আসন কমে তিনটি হলেও ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত পায় ১৭ আসন। চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভাতেও জায়গা পান জামায়াতের শীর্ষ দুই নেতা। একাত্তরে ন্যক্কারজনক ভূমিকার পরও খালেদা জিয়ার চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেয়াকে লাখো শহীদের প্রতি ‘চপেটাঘাত’ হিসেবে বর্ণনা করা হয় যুদ্ধাপরাধের এক মামলার রায়ে। সর্বশেষ ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দুটি আসন পায় জামায়াতে ইসলামী। এরপর তারা আর দলীয়ভাবে ভোট করতে পারেনি। সংবিধানের সঙ্গে গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ‘অবৈধ ও বাতিল’ ঘোষণা করে রায় দেন। গতবছর সর্বোচ্চ আদালতেও হাইকোর্টের ওই রায় বহাল থাকে। ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় জোটবদ্ধ হয় বিএনপি ও জামায়াত। এর ১৪ বছর পর ২০১৩ সালে একটি ইফতার পার্টিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম। ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় জোটবদ্ধ হয় বিএনপি ও জামায়াত। এর ১৪ বছর পর ২০১৩ সালে একটি ইফতার পার্টিতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম। নিবন্ধন বাতিলের পর জামায়াত দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্য বিবেচিত হয়নি। তবে ২০১৯ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটসঙ্গী বিএনপির নির্বাচনি প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নিয়েছিলেন জামায়াতের কয়েকজন। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিতে না পারলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াত নেতারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত