ট্যারিফ বৈষম্যের শিকার দেশের ইন্টারনেটের বাজার
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ট্যারিফের নামে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ব্যান্ডউইথের ক্রয়-বিক্রয় ও রেভিনিউ শেয়ারের বৈষম্য বাতিলের আহ্বান জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে গ্রাহক পর্যায়ে সুলভে মানসম্মত ইন্টারনেট সেবার পরিবেশ সৃষ্টিতে নীতিমালা সংশোধন এবং রাজস্ব আহরণের চেয়ে বিটিআরসিকে পুরোপুরি স্বাধীন কমিশন হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রতিও গুরুত্বারোপ করেছেন তারা।
গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের ‘ব্যান্ডউইথ ও ইন্টারনেটের বৈষম্যমূলক বাজার ব্যবস্থাপনা নিরসনে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা বলেন, মুষ্টিমেয় কিংবা গোষ্ঠীগত সুবিধা পাইয়ে দেয়ার নীতিমালা সংশোধন না করলে বৈষম্য থেকেই যাবে। আর নৈরাজ্য বাড়বেই। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ। সভায় ব্যান্ডউইথ বাজারে আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈষম্যের বিষয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন সংগঠনটির গবেষণা সদস্য মো. রানা।
এসময় বিটিআরসি সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল রেজাউর রহমান বলেন, আমাদের ত্রিমাত্রিকভাবে কাজ করতে হয়। সরকার, অপারেটর ও গ্রাহক এই তিন বিষয় সমন্বয় করেই আমরা কাজ করি। সরকারি-বেসরকারি ব্যবসার এপেক্স এবং ক্যাপেক্স এক না থাকায় ব্যান্ডউইথের দামের ভিন্নতা রয়েছে। আগামীতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্যও ট্যারিফ বেঁধে দেয়া হবে। ব্যান্ডউইথের দামের ক্ষেত্রে এখন রেট পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে। তবে এজন্য সময় লাগবে। কিন্তু কতটা সময় লাগবে তা বলতে পারছি না।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আইআইজিবি সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, সাধারণত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন একচেটিয়া ব্যবসা করতে না পারে সেজন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সেবায় আনা হয়। আইটিসি কম দামে ইন্টারনেট দেয়ায় সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি দাম কমাতে বাধ্য হয়। কিন্তু কোম্পানিটি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থেকেও মুনাফার দিকে বেশি মনোযোগী। ফলে তাদের দায়িত্ব পড়ে থাকছে। বাংলাদেশের আইটিসি অপারেট না থাকলে আমি হলফ করে বলতে পারি, আগামীকাল থেকে ইন্টারনেটের দাম আরো বেড়ে যাবে।
রবি আজিয়েটার রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহ মো. ফজলে খোদা বলেন, বোতলজাত পানির মধ্যে শুধু পানি আমাদের কাছে ব্যান্ডউইথ। এই ব্যান্ডউইথ যখন ইন্টারনেট হিসেবে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে হয়, তখন নানা খরচ রয়েছে। ওভারহেডের ২ দশমিক ৩ শতাংশ হচ্ছে আমাদের ব্যান্ডউইথ খরচ। এর ওপর রয়েছে করের বোঝা। গ্রাহকদের কাছে আমরা মাসে ১৪৫ টাকা রেভিনিউ পাই। এটা প্রতিবেশী দেশের চেয়ে কম। তাই এখন ইন্টারনেটের দাম কমাতে হলে টিকে থাকাই অসম্ভব।
এই খাতের বিভিন্ন বৈষম্য তুলে ধরে আইএসপিএবি সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া বলেন, ইন্টারনেট এখন মৌলিক অধিকার। কিন্তু সেই ইন্টারনেট নিয়ে কত শত প্রতারণা হচ্ছে তার ঠিক নেই।
প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের বলেন, সাধারণ বাজারের মতো এখানেও একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। নিজেদের আইনের অধীনেই এই অসম প্রতিযোগিতা দূর করতে পারে বিটিআরসি। কেন দূর করছে না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। সবশেষ সভাপতির বক্তব্যে দ্রুতই ইন্টারনেট খাতের বৈষম্য দূর করতে বিটিআরসিকে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।