ঢাকা ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

অস্ট্রেলিয়ায় আটক ৯৭ বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

অস্ট্রেলিয়ায় আটক ৯৭ বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

অস্ট্রেলিয়ায় ভিসা ছাড়া অনুপ্রবেশের চেষ্টার অভিযোগে আটক ৯৭ বাংলাদেশিকে ফেরত আনার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ভিসা ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা ৯৭ বাংলাদেশিকে ফেরত নিতে দেশটির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানিয়েছেন তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি ব্রুক। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ দফতরে টনি ব্রুক ও তার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অস্ট্রেলিয়া এরইমধ্যে দুই হাজারের মতো রোহিঙ্গা নিয়েছে। দেশটি আরও রোহিঙ্গা নিতে সম্মত হয়েছে। আরও বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা নিতে তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক যাতে আরও সহযোগিতাপূর্ণ হয় সেইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের কোস্ট গার্ডের সঙ্গে একটি চুক্তিস্বাক্ষর অনুষ্ঠান ছিল। ভারত মহাসাগরের সিকিউরিটি ইস্যুতে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার ফয়সল হাসান জানান, দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে দুই দেশের জনগণের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি, ট্রান্সন্যাশনাল অপরাধ মোকাবিলায় সহযোগিতা, সিভিল মেরিটাইম সিকিউরিটি এবং মেরিটাইম সেফটি বিষয়ে সহায়তা, প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন প্রতিরোধ বিষয়ে সহযোগিতা, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক (রোহিঙ্গা) ইস্যুসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকের শুরুতে উপদেষ্টা অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুপ্রতিম দেশ। দুই দেশের পুরোনো বন্ধুত্ব কমনওয়েলথ ঐতিহ্য এবং পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে আরও দৃঢ় হয়েছে। ১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম দেশগুলোর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক উইলিয়াম ওডারল্যান্ড একমাত্র বিদেশি নাগরিক যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশের অন্যতম সর্বোচ্চ পুরস্কার বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। বৈঠকে উপদেষ্টা আরও জানান, সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন এবং অর্থ পাচারসহ আন্তর্জাতিক অপরাধের ক্রমবর্ধমান হুমকি প্রতিরোধে বাংলাদেশ সর্বদা আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। এ বিষয়ে তথ্য বিনিময় এবং সহযোগিতা জোরদার ও সুসংহত করার ক্ষেত্রে আমাদের অভিন্ন দৃষ্টি ও আগ্রহ রয়েছে। এসময় অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশ নানা ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে। তরুণ প্রজন্ম অনলাইন ও বিভিন্ন মাধ্যমে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াও সাইবার হামলাসহ এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও তথ্য আদান-প্রদানকে সর্বাধিক গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে। বৈঠকে বাংলাদেশে ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ‘সিভিল মেরিটাইম সিকিউরিটি ও মেরিটাইম সেফটি’ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী ও অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে অস্ট্রেলিয়ান মেরিটিটাইম বর্ডার কমান্ডের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল ব্রেট সনটের। মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অস্ট্রেলিয়ান প্রতিনিধিদলে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার নারদিয়া সিমপসন, মন্ত্রীর চিফ অব স্টাফ ডেরিল ওয়াটকিনস, মন্ত্রীর সিনিয়র অ্যাডভাইজার অ্যান ক্লার্ক, অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র দফতরের ইমিগ্রেশন বিষয়ক সহযোগী সচিব এমা কেসার, অস্ট্রেলিয়ান মেরিটিটাইম বর্ডার কমান্ডের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল ব্রেট সনটের, অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক (নয়াদিল্লীর হাইকমিশনে সংযুক্ত) স্টিভ বিডল, বাংলাদেশ বিষয়ক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল জন ড্যাম্পসে, নয়াদিল্লীর অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক কাউন্সিলর জেড ডনি ও অস্ট্রেলিয়ান বর্ডার ফোর্স বিষয়ক কাউন্সিলর সুপারিন্টেন্ডেন্ট ব্যালিসে টেইলর। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অন্য সদস্যরা হলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. ময়নুল ইসলাম, বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু হেনা মোস্তফা জামান, সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নুরে আলম।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত