অক্টোবরে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১২ : এমএসএফ
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর মাসে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯ জনই আওয়ামী লীগের কর্মী বা নেতা। বাকি নিহত তিনজন বিএনপির। মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) করা অক্টোবর (২০২৪) মাসের প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এমএসএফ প্রতি মাসে মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব অনুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি হয়। এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বর মাসের মতো অক্টোবর মাসেও বিএনপির কর্মীদের অন্তর্দ্বন্দ্ব লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ কারণে নাগরিক জীবনে নিরাপত্তার বিষয়টি বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এমএসএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবরে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫৮টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৪২৪ জন। তাদের মধ্যে ১২ জন নিহত ও ৪১২ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৬ জন গুলিবিদ্ধ। সহিসংতার ৫৮টি ঘটনার মধ্যে ৩৭টি ঘটনা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলজনিত, ১৭টি বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে, দুটি আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল, দুটি ঘটনা ঘটেছে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে এবং নয়জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের নিহত সাতজনের মধ্যে চারজনের মৃত্যুতে সরাসরি বিএনপি ও জামায়াতের সংশ্লিষ্টতা, তিনজন রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং দুজনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের গণসংযোগে ব্যস্ততা দেখা যায়। অপর দিকে রাষ্ট্রপতির অপসারণ ও আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১ অক্টোবর চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় খাদেরগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম ঢালীর (৫৮) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ২ অক্টোবর গাজীপুরের কালীগঞ্জে বিএনপির দলীয় কোন্দলের জের ধরে জাইদুল হক শ্যামল (৫২) নামের এক কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ৩ অক্টোবর গাইবান্ধায় আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহমেদকে রাজনৈতিক শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। যদিও পুলিশের ধারণা দুর্ঘটনা। ৩ অক্টোবর মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে নিখোঁজের ১৬ ঘণ্টা পর শাহজাহান শেখ (৫৫) নামে আওয়ামী লীগের এক নেতার লাশ পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ৯ অক্টোবর রাজশাহীর মোহনপুরে একটি পটোলখেত থেকে আওয়ামী লীগের কর্মী শাহাবুল ইসলামের (৪৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
১৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ খানকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক রোষানলের ভয়ে পালিয়ে ছিলেন। ২১ অক্টোবর চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে গুলি করে ছাত্রলীগ কর্মী আফতাব উদ্দিন তাহসিনকে (২৬) কথিত শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিরা হত্যা করে বলে জানা যায়। ২৬ অক্টোবর রাজশাহীতে যুবলীগের কর্মী মীমকে তুলে নিয়ে গাছে ঝুলিয়ে পিটিয়ে ও রগ কেটে হত্যা করে স্থানীয় বিএনপির সমর্থকরা বলে দাবি করা হয়। ২৭ অক্টোবর ঢাকার উত্তরায় বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে সোহেল নামের এক যুবদল কর্মী নিহত হন। ৩০ অক্টোবর কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতার জেরে আওয়ামী লীগের সমর্থক দুই সহোদর হামিদুল ইসলাম (৫০) ও নজরুল ইসলামকে (৪৫) কুপিয়ে হত্যা করেন বিএনপির কর্মীরা। ৩০ অক্টোবর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে সুলতান (৪৫) নামে বিএনপির এক নেতা নিহত হন।
গণপিটুনি : এমএসএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি মাসে গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে ঘটেই চলেছে। গণপিটুনির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় জনমনে নিরাপত্তাবোধের বিষয়টি প্রশ্নাতীতভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ মাসে অন্তত ২৪টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ১৯ জন নিহত ও তিনজন নারীসহ ১৯ জন কিশোর ও যুবক গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন।