নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে বিসিক শিল্প নগরী সংলগ্ন ক্রোনী গ্রুপের দুটি কারখানার শ্রমিকরা। গতকাল সোমবার সকাল থেকে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে আশপাশের কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শ্রমিকরা জানায়, ক্রোনী ও অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেড কারখানার প্রায় নয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে কয়েকশ’ শ্রমিকদের কয়েক মাসের বকেয়া বেতন না দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে শ্রমিকদের কয়েক মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ না করেই গত সেপ্টেম্বর মাসে লে অফ ঘোষণা করে কারখানা দুটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ। ছয়-সাত মাসের বেতন বকেয়া থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করছে শ্রমিকরা। তাই বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে সকাল সাড়ে দশটায় কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে পুনরায় বিক্ষোভ করে কয়েকশত শ্রমিক। এক পর্যায়ে আন্দোলনরত শ্রমিকরা নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিসিক শিল্প নগরীর ভেতরে কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর চালায়। এসময় অধিকাংশ কারখানার শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সহ আইনশৃংখলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা কারখানা কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সাথে বকেয়া বেতন পরিশোধের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে শ্রমিকরা তিনটার দিকে সড়ক অবরোধ তুলে রাস্তার পাশে অবস্থান নেয়।
পরে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাকিব আল রাব্বি শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যান।
ক্রোনী গ্রুপের অবন্তী কালার টেক্স নামের পোশাক কারখানার সুইং সেকশনের শ্রমিক জাহানারা বেগম বলেন, গত বছর থেকে এ কারখানার মালিক বেতন নিয়ে গড়িমসি শুরু করে। গত আগস্ট মাস থেকে আমার বেতন বকেয়া। বেতন না দিয়ে গত মাসে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়। অনেকের কাছে আমরা গেছি, কোনো সমাধান পাই নাই। তাই বাধ্য হয়ে সড়কে নামছি আমরা।
বিসিকের আর ফোর নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক শাহিদা আক্তার বলেন, আমাদের লাঞ্চ হয় সাড়ে বারোটায়। কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর করায় ভয়ে কারখানা ছুটি দিয়ে দেয়া হয়েছে। বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পাঞ্চলে ৪৩২টি কারখানা রয়েছে। তবে সব কারখানায় কাজ নেই। বিসিকের বাইরের একটি গার্মেন্টে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বিসিকের অধিকাংশ কারখানা লাঞ্চের আগেই ছুটি দিয়ে দেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, বিকালের দিকে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঘটনাস্থলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন আছেন। দীর্ঘ সময় অবরোধের কারণে পঞ্চবটি-মুন্সীগঞ্জ সড়কে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহমুুদুল হক বলেন, বিষয়টি সমাধানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাকিব আল রাব্বির সঙ্গে শ্রমিকদের কথা হয়েছে। তাদের বেতন পরিশোধ করার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। আশ্বাস পেয়ে তারা সড়ক থেকে সরে গিয়েছেন। বিষয়টি অতি দ্রুত কীভাবে সমাধান করা যায় এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আবারও বৈঠক করা হবে বলে জানান তিনি।