বিড়ি প্রাচীন শ্রমঘন একটি শিল্প। দেশের প্রায় ১৮ লাখ হতদরিদ্র, স্বামী পরিত্যক্তা, শারীরিক বিকলাঙ্গ শ্রমিক বিড়ি কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে অন্য কোনো শিল্প কারখানা না থাকায় দরিদ্র, অশিক্ষিতদের কর্মসংস্থানের ঠিকানা বিড়ি শিল্প। শ্রমঘন দেশীয় শিল্প হিসেবে যেখানে অনুকূল্য পাওয়ার দাবিদার সেখানে উল্টো বিদেশি সিগারেট কোম্পানির তুলনায় বৈষম্যের শিকার বিড়ি শিল্প। অভিযোগ উঠেছে বিগত সরকারের দোসর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ষড়যন্ত্র করে সিগারেটের বিপরীতে বিড়িতে মাত্রাতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দেন। এতে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিড়ি কারখানা। আর কাজ হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অসহায় শ্রমিকরা।
বিড়ি শিল্প মালিক ও শ্রমিকরা জানান, বিড়ি ও সিগারেট একই গোত্রভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও দুটোর মাঝে বৈষম্য বিরাজ করছে এবং বিড়িকে অসম প্রতিযোগিতায় বাধ্য করা হচ্ছে। বিড়ি শতভাগ দেশীয় প্রযুক্তি ও শ্রমিকনির্ভর শিল্প। এতে ব্যবহৃত সকল কাঁচামাল দেশেই উৎপাদিত। অন্যদিকে সিগারেট সম্পূর্ণ যন্ত্রের সাহায্যে তৈরি করা হয় এবং এতে বিদেশি কাঁচামাল ব্যবহৃত হয়। অথচ বিড়িতে অগ্রিম আয়কর ১০ শতাংশ আর সিগারেটে ৩ শতাংশ। বিড়ি ও সিগারেটের অগ্রীম আয়করে যে পরিমাণ বৈষম্য রয়েছে তা দেশীয় শিল্প ধ্বংস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা- ১২৯ অনুযায়ী শুধুমাত্র বিড়ির কর হার ১০%। ধারা-১৫২ অনুযায়ী সিগারেটের উপর কর হার ৩%। বিড়ির কর ধারা-১২৯ কে ধারা-১৬৩ তে ‘ন্যূনতম কর’ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে এবং সিগারেটের ধারা- ১৫২ কে ধারা-১৬৩ তে ‘ন্যূনতম কর’ হিসাবে গণ্য করা হয়নি। বিড়ি প্রস্তুতকারকের কাছে ব্যান্ডরোল বিক্রির জন্য মোট মূল্যমানের ১০% হারে কর সংগ্রহ করবে বলে আয়কর আইনের ১২৯ ধারায় উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া ধারা-১৫২ তে সিগারেটের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে নিট বিক্রয়মূল্যের ৩% হারে অগ্রিম কর এবং পরিশোধযোগ্য অগ্রিম করের ত্রৈমাসিক কিস্তির বিপরীতে সমন্বয়যোগ্য হবে। বাংলাদেশ বিড়ি শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি বিজয় কৃষ্ণ দে জানান, বিড়ির উপর ১০ শতাংশ কর সমন্বয়যোগ্য নয়। কিন্তু সিগারেটের ৩ শতাংশ কর সমন্বয়যোগ্য। বিড়ির কর ‘ন্যূনতম কর’ কিন্তু সিগারেটের ক্ষেত্রে তা গণ্য হয়নি। সিগারেটের ন্যায় বিড়ির অগ্রিম আয়কর ৩ শতাংশ নির্ধারণ পূর্বক আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা-১২৯ এবং ধারা-১৬৩ সংশোধন হওয়া আবশ্যক। সিগারেটের কর হার ৩ শতাংশ হওয়ায় যেমন রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি, তেমনি বিড়ি শিল্পে অভিন্ন কর হার প্রয়োগ করা হলে নকল বিড়ি তৈরি বন্ধ হবে এবং সরকারের রাজস্ব বাড়বে।
তিনি আরো জানান, ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে বিজয় অর্জনের পরে দেশের বিভিন্ন সেক্টরে বৈষম্য দূর হয়েছে। কিন্তু বিড়ি ও সিগারেটের অগ্রিম আয়করের বৈষম্য এখনো বিরাজ করছে। বিড়ি শিল্পের ওপর থেকে অগ্রিম আয়করের বৈষম্য দূর করা হলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের পথ আরো সুদৃঢ় হবে। বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিন উদ্দিন বিএসসি বলেন, বিড়ি দেশের গরিব মানুষ তৈরি করে এবং গরিব মানুষ ধূমপান করে। এখানে শমিকের কর্মের সুযোগ রয়েছে। আর সিগারেট মেশিনে তৈরি হয় এবং ধনীরা ধূমপান হিসেবে ব্যবহার করে। অথচ বিড়ি ও সিগারেটের অগ্রীম আয়কর চরম বৈষম্যমূলক। সকল বৈষম্য দূর করতে শ্রমিক, ছাত্র-জনতা আন্দোলন করে স্বৈরাচার হটিয়েছি। সুতরাং বিড়ির ওপর থেকে বৈষম্যমূলক আয়কর প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।