তিন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন মেয়র ডা. শাহাদাত

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চট্টগ্রাম ব্যুরো

নগরীতে তিনটি অবকাঠামো প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল রোববার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হওয়া প্রকল্প তিনটির মাঝে আছে ১৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ তলাবিশিষ্ট হালিশহর আলহাজ মহব্বত আলী সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন। ২৬নং হালিশহর ওয়ার্ডে ১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ তলা কিচেন মার্কেট কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ৩৭নং ওয়ার্ডস্থ জরিনা মফজল কলেজ সংলগ্ন ২.৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে রোড ড্রেইনসহ উন্নয়নের কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আলহাজ মহব্বত আলী সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে নৈতিক শিক্ষার উপর জোরারোপ করে মেয়র বলেন আমরা যদি নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হই তাহলে সমাজকে আমরা কিছু দিতে পারবো না। পড়াশোনা করে আজকে আমি ডাক্তার হয়েছি, সব ঠিক আছে। কিন্তু ডাক্তার যখন মানবিক হতে না পারবে, একটা গরিব রোগীকে চিকিৎসা বিনামূল্যে দিতে না পারবে তখন এই শিক্ষার কোনো দাম নেই। একজন শিক্ষক একটা মেধাবী গরিব ছাত্রকে বিনামূল্যে পড়াতে না পাড়লে ওনার শিক্ষার কোনো দাম নেই। এভাবে প্রতিটি পেশাতে আমাদের মানবিক যদি হতে হয়, আমাদের যদি সামাজিক হতে হয়, আমাদের যদি সমাজের সত্যিকার দায়িত্ব পালন করতে হয় তাহলে আমাদের অবশ্যই নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। শিক্ষা খাতে দেশ পিছিয়ে গেছে দাবি করে মেয়র বলেন, গত ১৬টি বছর আমরা দেখেছি শিক্ষার নামে বিভিন্ন ধরনের নৈরাজ্য হয়েছে। চাঁদাবাজি হয়েছে। আমার ছাত্রছাত্রী ভাইবোনদের বইয়ে বানোয়াট ইতিহাস পড়ানো হয়েছে। এখানে শিক্ষক-শিক্ষিকা যারা আছেন মনে রাখবেন যে, বিগত সরকারের সময় মাদকাশক্তিতে অনেক ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকে বিভিন্নভাবে খারাপ ছেলের সংস্পর্শে এসে খারাপ হয়ে গেছে। কিশোর গ্যাং কালচার তৈর হয়েছে ওই সরকারের আমলে। আপনাদের আমাদের সন্তানদের বাঁচাতে হবে। তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখবেন। তাদের নখ পরিষ্কার আছে কি না, তাদের চুল ঠিক আছে কি না, হাইজিন মেন্টেন করছে কি না ছাত্ররা সব চেক করা আপনাদের দায়িত্ব। তাদের সুস্থ নাগরিক হিসেবে গড়তে হবে আপনাদের। কিচেন মার্কেট কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনকালে মেয়র বলেন, যেহেতু কোনো কমিউনিটি সেন্টার বা বড় মার্কেট এই এলাকায় ছিল না সেহেতু আমরা চমৎকার একটা মার্কেট এই এলাকায় করে দিচ্ছি যাতে করে এলাকাবাসীর সুবিধা হয়। এই আধুনিক বিল্ডিং এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করবে। বৃষ্টির পানির ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, রেইনওয়াটার হারভেস্ট সম্বন্ধে আমি আপনাদের কিছু বলতে চাই। রেনওয়াটার হারভেস্টিং মানে বৃষ্টির পানি যেটা পড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় সেটাকে আমরা একটা বৈজ্ঞানিক উপায়ে ধারণ করে এই পানিটা রিসাইক্লিং করে ব্যবহার করতে পারি। পানির কিন্তু সংকট হবে ভবিষ্যতে। এজন্য ওয়াসার পানিকে আমরা নষ্ট করবো না। আমরা যত্রতত্র এই যে পানি নষ্ট করছি এটা কিন্তু আমাদের জন্য পরবর্তীতে গিয়ে সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ পানি আমাদের সেভ করতে হবে। পানির অপর নাম জীবন। আজকে আমরা হয়তো মনে করছি যে, পানি তো আছে দেদারসে খরচ করি। একটা স্টেজে পানির অভাব দেখা দিবে। এখন একটা নলকূপ লাগাতে গিয়ে দেখবেন অনেক গভীরে চলে যেতে হচ্ছে। তার অর্থ হচ্ছে এটা হয়তো গুড সাইন না। কাজেই পানির স্তর যত নিচে যাবে তত মনে করবেন যে ভূগর্ভে পানি কমে যাচ্ছে। ভূগর্ভে পানি কমে যাওয়া এটা রিস্কি। এজন্য বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে যে বিল্ডিং কোডগুলো আছে সেগুলো মেনে চলবেন। আপনারা নিয়ম মেনে চললে দেখবেন যে জলাবদ্ধতা হবে না।

নেক্সট জেনারেশনের জন্য আপনাদের কথা চিন্তা করতে হবে। শুধু এখন আপনারা সুখী থাকবেন বউ বাচ্চা নিয়ে এটা চিন্তা করবেন না। মেয়র ২৬নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্ন বিভাগের কর্মীদের হাজিরা নেন এবং বিভিন্ন এলাকায় নাগরিকদের কাছে এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে মতবিনিময় করেন। এরপর মেয়র নগরীর সিআরবি এলাকার ভাঙ্গা সড়ক মেরামতের কাজ পরিদর্শন করেন এবং প্রকৌশল বিভাগকে দ্রুত নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামত করার নির্দেশ দেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিল্লুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. শরফুল ইসলাম মাহি, উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব শর্মা, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী (মারুফ)সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।