আনু মুহাম্মদ

শিগগির নির্বাচনের রোডম্যাপ না দিলে অনাস্থা তৈরি হতে পারে

প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

শিগগির নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ বা পথ-নকশা না দিলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর জনগণের অনাস্থা তৈরি হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয়’ প্রস্তাব ১০০ দিনে কতটা বাস্তবায়ন হলো’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি নামের একটি সংগঠন এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ সংগঠনের সদস্য। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশে ২০০৮-এর পরে আর কার্যত কোনো নির্বাচন হয়নি। ২০১৪ থেকে হাসিনার সরকার ছিলেন মেয়াদোত্তীর্ণ সরকার বা অনির্বাচিত সরকার। সুতরাং, আমরা মনে করি, নির্বাচনব্যবস্থার মধ্যে যে ধস নেমেছিল, সেটি মেরামত বা সংস্কার করতে হবে। সেটা সংস্কার করে যথাযথভাবে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের কাঠামো তৈরি করা সরকারের দায়িত্ব। সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, সেই বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য বলেন, অনেকগুলো সংস্কার আছে, যা দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার, তা নির্বাচিত একটি স্থায়ী সরকার ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। অন্তর্বর্তী সরকার হিসেবে অনেকগুলো ভিত্তি তৈরি করতে পারে এ সরকার। বিভিন্ন কমিশন হয়েছে, তার মধ্যদিয়ে তৈরি হবে। সেই প্রক্রিয়াটা চলতে পারে। কিন্তু নির্বাচনের বিষয়ে একটি প্রস্তুতি বা পথ-নকশা বা উদ্যোগ, কবে নাগাদ নির্বাচন হবে, কী কী পদ্ধতিতে তারা অগ্রসর হবে, সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন। যথাযথভাবে এ ঘোষণা না এলে, এটি যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে একটি অনাস্থা বা অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ার শঙ্কা থাকে। তা থেকে বাঁচার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ বা পথ-নকশা ঘোষণা করা উচিত বলে আম মনে করি। তিনি বলেন, কতদিনের মধ্যে নির্বাচন চাই, সেই তারিখ তো নির্দিষ্ট করে আমরা বলতে পারব না। আমরা মনে করি, সবকাজই আপনি যদি গুরুত্বের সঙ্গে নেন এবং দক্ষতার সঙ্গে করেন তাহলে যত সময় লাগবে, গুরুত্বের সঙ্গে না নিলে তার থেকে বেশি সময় লাগবেই।

আমি মনে করি, সরকার গুরুত্বের সঙ্গে এটি নেবে এবং যথা শিগগির সম্ভব, সে বিষয়ে জনগণকে পরিষ্কার বক্তব্য দেবে। নইলে একটি অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে, অনাস্থা তৈরি হওয়ার শঙ্কা আছে। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছি। সেগুলো যাতে বন্ধ হয়। সেজন্য সরকারের এ উদ্যোগ নেয়া দরকার। আরেক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন গোষ্ঠী তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে। তাদের দাবি-দাওয়াগুলো খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। কারণ, বহু বছরে মানুষের মধ্যে বঞ্চনা আছে, মানুষের মধ্যে অনেক রকমের ক্ষোভ আছে, অনেক রকম সমস্যা আছে।

সেগুলো সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত। জোর-জবরদস্তি কিংবা ধরপাকড় কিংবা কেউ আন্দোলন করলে তাকে ট্যাগ লাগানো এ প্রবণতা, যেটা অতীতের সরকারের সময়ে ছিল, এটা যেন অব্যাহত না থাকে। যেমন অটোরিকশা বলেন, কিংবা অন্যান্য পেশাজীবী বলেন, তাদের জোর-জবরদস্তি করে তো সমস্যার সমাধান হবে না। এটা তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান করতে হবে, সমাধানের পথে যেতে হবে। এর আগে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের আশু করণীয়’ নিয়ে ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে সেই প্রস্তাবগুলো কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে সেই বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে আলোকপাত করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এছাড়া আগামী শনিবার (২৩ নভেম্বর) বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘বৈচিত্রের ঐক্য’ নামের বাংলাদেশের সব শ্রেণিগত, ধর্মীয়, লিঙ্গীয়, জাতিগত, পেশাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের মানুষের সমাবেশ হবে বলে জানান অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক মোসাইদা সুলতানা, মাইকেল চাকমা, সিপিডির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুল্লাহ আল কাফি, ডা. হারুনুর রশিদ, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহা মির্জা, সীমা দত্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।