নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে সরকারি নীতিতে পরিবর্তন প্রয়োজন, যাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পরিবেশবান্ধব শক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়। এছাড়া বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সরঞ্জামের ওপর উচ্চ শুল্ক ব্যবস্থার বিলুপ্তি, কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে ভর্তুকি চালু করা এবং জ্বালানি দক্ষতার জন্য আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত অ্যাক্সপ্লোরিং এ সাস্টেইনেবল পাথওয়ে ফর বাংলাদেশ’স এনার্জি ট্রান্সফর্মেশন স্টুয়ার্ডস গ্রিন এ্যান্ড ক্লিন এনার্জি’ শীর্ষক এক জাতীয় পর্যায়ের সংলাপে এই তথ্য তুলে ধরা হয়। এই আয়োজনে সানেম মোট তিনটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করে।
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনা করেন সানেমের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী মো. তুহিন আহমেদ ও গবেষণা সহযোগী একরামুল হাসান। গবেষণায় জ্বালানি মূল্য ওঠানামার সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রভাব: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট শিরোনামে প্রথম গবেষণায় বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর বৈশ্বিক জীবাশ্ম জ্বালানির মূল্য পরিবর্তনের প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছে। এই গবেষণায় বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর জীবাশ্ম জ্বালানির বৈশ্বিক মূল্য ওঠানামার প্রভাব বিশ্লেষণ করে বলা হয়, কয়লা এবং এলএনজির মূল্যবৃদ্ধি সমকালীনভাবে ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) ওপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। উভয়ই সিপিআই মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে তোলে। জ্বালানির মূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর কোনো উল্লেখযোগ্য সমকালীন প্রভাব নেই।
গবেষণায় ইম্পালস রেসপন্স ফাংশনের ফলাফল স্পষ্টভাবে দেখায় যে, জ্বালানি মূল্য পরিবর্তনের প্রতি এক স্ট্যান্ডার্ড ডেভিয়েশন ধনাত্মক প্রভাব সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে এবং এটি নীতি গ্রহণের প্রক্রিয়াতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব সৃষ্টি করতে সক্ষম। ভ্যারিয়েন্স ডিকম্পোজিশনের ফলাফল দেখায় যে, সব ধরনের জ্বালানি মূল্যের আকস্মিক পরিবর্তন প্রতিক্রিয়ায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।
হিস্ট্রিকাল ডিকম্পোজিশন থেকে প্রমাণিত হয় যে, ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক সংকট, ২০২০ সালের কোভিড-১৯ মহামারি, ২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি সংকটে জ্বালানির মূল্য ওঠানামা ছিল সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক পরিবর্তনের প্রধান উৎস। অন্যদিকে জোহানসেন কোইনটিগ্রেশন টেস্টের ফলাফল নির্দেশ করে যে, সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদি সময়কালে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক এবং বিভিন্ন জ্বালানি মূল্যের মধ্যে একটি সম্পর্ক বিদ্যমান।