লাখ টাকা ঋণের প্রলোভন দেখিয়ে সারা দেশ থেকে মানুষ এনে ঢাকার শাহবাগে জমায়েতের চেষ্টা চালিয়েছে ‘অহিংস গণ অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন। গত রোববার মধ্যরাত থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষভর্তি করে শতাধিক বাস, পিকআপ ও মাইক্রোবাস শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আসতে থাকে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খালিদ মনসুর। বিভিন্ন এলাকা থেকে যারা আসনে তারা বেশিরভাগই স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদেরকে বলা হয় শাহবাগে সমাবেশ হবে, সেখানে যারা উপস্থিত থাকবে তাদেরকে ‘এক থেকে পাঁচ লাখ টাকা’ ঋণ দেয়া হবে। ২৫ নভেম্বর ‘রাজধানীর শাহবাগে মহাসবেশ’ লেখা ব্যানারও দেখা গেছে কয়েকটি গাড়িতে। মোস্তফা আমীন নামের এক ব্যক্তির নামে লিফটলেট পাওয়া গেছে সেখানে আসা অনেকের কাছে। লিফলেটে মোস্তফা আমীনকে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে শাহবাগ এলাকায় আসা গাড়িভর্তি লোকজনকে জমায়েত হতে দেয়া হয়নি, কথা বলে প্রত্যেকটি গাড়ি ফিরিয়ে দিয়েছেন পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে বাসে আসা এক নারী বলেন, তাকে বলা হয় শাহবাগ গেলে এক লাখ টাকা ঋণ দেয়া হবে। মাসে ৩-৪ হাজার টাকা করে শোধ করতে হবে। এ জন্যই তিনি এসেছেন, এরচেয়ে বেশি কিছুই তিনি জানেন না। ওসি খালিদ মনসুর বলেন, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত শত শত বাস ও মাইক্রোবাস ভর্তি মানুষ শাহবাগ এলাকায় আসে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সেসব মানুষদেরকে মোটা অঙ্কের ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় আনা হয়। সেসব বাসে আসা অনেককেই আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এদের নিয়ে আসার পেছনে কারা কাজ করেছে তাদের বিষয়ে জানার চেষ্টা চলছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। এ ঘটনায় মোস্তফা আমীনসহ কয়েকজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে জানিয়ে পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা বলেন, আমরা বেশ কয়েকজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও অনেককে আমাদের কাছে সোপর্দ করছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে পরবর্তি ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রাথমিকভাবে এই সংগঠনে সংশ্লিষ্টতা ছাড়া মোস্তাফা আমীনের অন্য কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
‘অহিংস গণ অভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে সংগঠনটি মানুষদের প্রলোভন দেখিয়ে এর আগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ করেছে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা জুয়েল রানা বলেন, গতকাল সোমবার তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে একটি আবেদন করেছিল। আমরা যাচাই-বাছাই করে তাদেরকে অনুমতি দেইনি। কিন্তু তারা যে আবেদনটি করেছিল, সেখানে পুলিশের স্বাক্ষর দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে বলেছে তারা সমাবেশের অনুমতি পেয়েছে। সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করতে না দিলে শাহবাগে সমাবেশ করার পরিকল্পনা ছিল তাদের। তিনি আরো বলেন, গ্রাম-গঞ্জে সংগঠনটির ব্যানারে মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে বিভিন্ন যানবাহন ভাড়া করে ঢাকায় নিয়ে আসে। গাড়িতে আসা লোকজনদেরকে আমরা সবার সহযোগিতায় বুঝিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছি।