বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গত কয়েকদিনের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত চিন্তিত উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত। কিছু মানুষ নিজেদের বুদ্ধিমান ও দেশপ্রেমিক মনে করেন, আর তারা আজ গোটা জাতিকে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। আজ প্রশ্ন উঠেছে- যার জন্য এত প্রাণ দিলাম তার ফলশ্রুতি কি এই বাংলাদেশ? গতকাল বুধবার প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ‘শহীদ ডা. শামসুল আলম খান মিলন’ দিবস উপলক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ড্যাব। মির্জা ফখরুল বলেন, ৫ আগস্টের বিজয় অনেক প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। রক্তে ভেসে গেছে বাংলাদেশের রাজপথ। দেশের মানুষ বারবার দেশমাতৃকার জন্য প্রাণ দিয়েছে। আজ প্রশ্ন উঠেছে- যার জন্য এত প্রাণ দিলাম তার ফলশ্রুতি এই বাংলাদেশ?
তিনি বলেন, তিন মাসও হয়নি এখন রাস্তায় রাস্তায় অবরোধ শুরু হয়েছে, একজন আরেকজনের রক্ত ঝরাচ্ছে। বিভিন্ন পত্রিকা অফিস পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এ কোন বাংলাদেশ? গত ৫ আগস্টের আগে এই বাংলাদেশকে তো চিনতাম না। কেন এই ভয়াবহ বিভেদণ্ডহিংসা? আজকে কেন এত ভয়াবহ অস্থিরতা? সমস্যাটা কোথায়? আমাদের ব্যর্থতা, গণতন্ত্রকামীদের আত্মত্যাগকে সত্যিকার অর্থে বাস্তবে রূপ দিতে পারিনি। ৯০-এ স্বৈরাচার আন্দোলনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে। আর ২০২৪ সালেও গণতন্ত্রের জন্য আবার প্রাণ দিতে হলো। কেমন জাতি আমরা? বিএনপি মহাসচিব বলেন, সবাই মিলে আমরা একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু তিন মাসের মধ্যেই আমাদের সেই আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এরকম চেহারা নিয়ে কোনোদিনই সফল হওয়া যাবে না। যতই বড় বড় কথা বলি বা বক্তব্য দিই না কেন কাজ হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ধর্মকে কেন্দ্র করে কী উন্মাদনা শুরু হয়েছে, এটা কি চিন্তা করতে পারেন? গত কয়েকদিনের ঘটনায় আমরা অত্যন্ত চিন্তিত, উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত। বাংলাদেশকে কোন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আমাদের সবাইকে দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন কথা বলতে হবে। ‘গত কয়েকদিন নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। মুক্ত ও স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য লড়াই করেছি, আজকে সেই মিডিয়া পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এই বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই না। প্রথম আলো, ডেইলি স্টারসহ অন্যান্য মিডিয়াতে যে ধরনের আক্রমণ শুরু হয়েছে তার নিন্দা জানাই।’ অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার কারো একক নয়। অসংখ্য তরুণ-জনতার আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। সুতরাং গণতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করুন। দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এমন কোনো কথা বলবেন না যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। যদি দেশকে ভালোবাসেন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না। কারো কাছে মাথানত করবেন না। ডা. মিলনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, তার অবদান কখনো ম্লান হবে না। গণতন্ত্রের সব শহীদকে শ্রদ্ধা জানাই। আসুন ডা. মিলন যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে জীবন দিয়েছেন সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি। যার জন্য জীবন দিয়েছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। দীর্ঘ ছয় বছর কারাগারে কাটিয়ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আমাদের ব্যর্থতা যে শহীদ ডা. মিলনের স্বপ্ন আমরা বাস্তবে রূপদান করতে পারিনি। বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ডা. মিলন হত্যার সত্যিকার অর্থে এখনো বিচার হয়নি। ওই মামলার বাদী মোস্তাক এখনও জীবিত আছে। সেই সময়ে মামলার সাক্ষী ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন সাক্ষী দেয়নি। তৎকালীন যাদের সঠিক সাক্ষী দেওয়ার কথা ছিল তারা স্বার্থের কারণে সত্য সাক্ষ্য দেয়নি। তিনি বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ না পালালেও এক স্বৈরাচার দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। কিন্তু তার দোসররা এখনো রয়েছে। তারা বিভিন্ন ইস্যুতে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। কিন্তু জনগণের ঐক্যের সামনে যড়যন্ত্রকারীরা দাঁড়াতে পারবে না। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ। মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালামের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে এতে আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, ড্যাবের সাবেক সভাপতি একেএম আজিজুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ।