ঢাকা ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ডিবি হারুনের সেই রিসোর্টে অভিযান, নথিপত্র জব্দ

ডিবি হারুনের সেই রিসোর্টে অভিযান, নথিপত্র জব্দ

কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে সাবেক ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদের মালিকানাধীন প্রেসিডেন্ট রিসোর্টে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। অভিযানে রিসোর্টের চারটি কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক ও বেশকিছু নথিপত্র জব্দ করা হয়। গতকাল সোমবার বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিচালক চাঁদ সুলতানা চৌধুরানীর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়। তারা রিসোর্টের বিভিন্ন কক্ষসহ আশপাশে তল্লাশি চালান। দুপুর সোয়া ২টা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা অভিযান চালায় ওই টিম।

পরে চাঁদ সুলতানা চৌধুরানী বলেন, অভিযানে কিছু তথ্য, প্রমাণাদি সংগ্রহ করেছি। কম্পিউটারের হার্ডডিক্স ও নথিপত্র জব্দ করেছি। এগুলো আমরা নিয়ে যাচ্ছি। পিডব্লিউডি ও সার্ভারের সহায়তায় ল্যান্ড এবং কনস্ট্রাকশনের মেজারমেন্ট নেয়া হয়েছে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে কর ফাঁকির বিষয়টি আমরা বের করতে পারব। আমাদের টিম সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত এবং যারা সাপোর্ট করেছে তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে বলতে পারব আসলে কী পাওয়া গেছে। বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। তদন্ত সাপেক্ষে যে রেজাল্ট আসবে তারপর সরকার ডিসিশন নেবে। আমরা আসলে ন্যাশনাল টাস্কফোর্সের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এ অভিযান পরিচালনা করে

এর আগে কর ফাঁকি, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অভিযোগে মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ ও তার পরিবারের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব জব্দে চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। গত ২১ অক্টোবর এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) থেকে দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয়া হয়। তাতে সাবেক ডিবিপ্রধান ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।

হারুন ছাড়াও তার বাবা-মা, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে বা বোনের যৌথ নামে অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবও জব্দ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।

কিশোরগঞ্জের মিঠামইন হাওর উপজেলার দুর্গম ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে হারুনের বাড়ি। হোসেনপুরে নিজের বাড়ির পাশে শত কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তুলেছেন বিলাসবহুল এ রিসোর্ট।

প্রায় ৩০ একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা রিসোর্টে তিন তারকা মানের ২০টি দোতলা কটেজ। এর ৪০টি কক্ষই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। বিশাল জলাধারের চারপাশ ঘিরে পাকা সড়ক। একপাশে কটেজ, বিশাল সুইমিং পুল, ওয়াচ টাওয়ার, গেমজুন ও পার্টি সেন্টার। অপর পাশে রেস্টুরেন্ট। এখানে একরাতের ভাড়া ন্যূনতম ৭ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৮ হাজার টাকা। রিসোর্টের ভেতরে বিশাল পুকুরের মাঝে তৈরি করা হয়েছে হেলিপ্যাড। হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে যখন তখন নিজের রিসোর্টে চলে আসতেন হারুন অর রশীদ।

মন্ত্রী-এমপি, সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র তারকারা যখন তখন ছুটে আসতেন হারুনের রিসোর্টে। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন রিসোর্টটি পরিদর্শন করেন মো. আব্দুল হামিদও। মূলত তার নামেই এই রিপোর্টের নামকরণ করা হয়েছে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রিসোর্টটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের বড় ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এটি উদ্বোধন করেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পালিয়ে যান গোয়েন্দা পুলিশের আলোচিত কর্মকর্তা হারুন। এলাকা ছেড়ে চলে যান রিসোর্টের এমডি তার ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ার কবির। এরপর থেকেই বন্ধ তিন তারকা মানের এ রিসোর্ট।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত