মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরের সীমান্ত এলাকা এখন সম্পূর্ণ আরাকান আর্মির (এএ) নিয়ন্ত্রণে। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সর্বশেষ দুর্গ বর্ডার গার্ড পুলিশ-৫ (বিজিপি-৫) ব্যারাক গত সপ্তাহে তাদের কাছে হার মেনেছে। এ বিজয় শুধু একটি সামরিক অভিযানের সমাপ্তি নয়, বরং মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। বিজিপি-৫ ব্যারাকের পতনের মুহূর্ত ছিল মর্মান্তিক। আরাকান আর্মির ভিডিওতে দেখা গেছে, তাদের যোদ্ধারা বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে ব্যারাক লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছেন। অনেকে খালি পায়ে, হাতে নানান অস্ত্র। এরই মাঝে মিয়ানমার বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো আকাশে গর্জন করছিল। আরাকান আর্মির এক মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, ব্যারাকগুলোর চারপাশে খুঁটি বসানো গভীর পরিখা ছিল। সেখানে প্রায় হাজার খানেক মাইন পুঁতে রাখা ছিল। আমাদের অনেক যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছে বা তাদের অঙ্গহানি হয়েছে। ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তা সরকারের নেতা জেনারেল মিন অং হ্লাইং একের পর এক পরাজয়ের মুখোমুখি হচ্ছেন। এই পরাজয় তার নেতৃত্বের প্রতি প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এবারই প্রথম তার সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত পুরোপুরি হারিয়েছে। মংডু শহরের কাছে অবস্থিত বিজিপি-৫ ব্যারাক ছিল তাদের সর্বশেষ দুর্গ। এটি ছিল ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো সহিংসতার সময় পুড়িয়ে দেয়া একটি গ্রামের জায়গায় নির্মিত। ২০১৫ সালে রাখাইন রাজ্যে ফিরে আসা আরাকান আর্মি আট বছর ধরে স্বায়ত্তশাসনের জন্য লড়াই করছে। চীনের সীমান্ত থেকে যাত্রা শুরু করে তারা এখন নিজেদের কার্যকরী সামরিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাদের রয়েছে উন্নত অস্ত্র ও সংগঠনের ক্ষমতা। গোষ্ঠীটির নেতারা বর্তমানে রাখাইন রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায় নিজেদের প্রশাসন পরিচালনা করছেন। তবে মংডু ও আশপাশের এলাকায় চালানো তীব্র লড়াইয়ে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, মংডুর আশি শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রায় সব দোকান লুট হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে বর্তমানে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। ২০১৭ সালের গণহত্যার সময় ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যান। তবে রোহিঙ্গা ও রাখাইন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির কারণে আরাকান আর্মি তাদের প্রশাসনে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্ত করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সম্প্রতি আরাকান আর্মি রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়েছে। আগস্ট মাসে তাদের ড্রোন হামলায় বহু রোহিঙ্গা নিহত হন। রোহিঙ্গা নেতারা জানান, তাদের অবস্থা এখন সামরিক জান্তার শাসনের চেয়েও খারাপ। রাখাইন জনগোষ্ঠী তাদের রাখাইনে দেখতে চায় না।