মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় ‘মব জাস্টিস’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে হওয়া বিচার)-এর নামে মানুষকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাগুলো ছিল উদ্বেগজনক। ২০২৪ সালের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করে আসক বলেছে, এবার গণপিটুনিতে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা গত বছরের দ্বিগুণের বেশি। গতকাল মঙ্গলবার বছরের শেষ দিনে এ প্রতিবেদন দিয়েছে আসক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে গণপিটুনির ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১২৮ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগেই নিহত হয়েছেন ৫৭ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৯ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫ জন, রংপুর বিভাগে ৫ জন এবং সিলেট বিভাগে ৪ জন নিহত হয়েছেন। ২০২৩ সালে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছিলেন ৫১ জন। ‘মব জাস্টিসের’ প্রসঙ্গ তুলে আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এক তরুণকে পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি সমালোচনার ঝড় তোলে। চলমান পরিস্থিতিতে পিটিয়ে হত্যা বা মব জাস্টিজের মতো ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের পদধারী নেতা ও কর্মীরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন। ৭ সেপ্টেম্বর রাতে পিটিয়ে হত্যা করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে। বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে তাঁর ওপর হামলা হয়। পরে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় থানায় সোপর্দ করা হয়। এরপর হাসপাতালে নেয়া হলে মধ্যরাতে তিনি মারা যান। মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য ছিলেন। ২০১৪ সালের এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলের সামনে হামলার শিকার হয়ে তিনি ডান পা হারিয়েছিলেন। বাঁ পা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তখন। তিনি কৃত্রিম পা নিয়ে চলাফেরা করতেন।
বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ হয়নি : আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমে এলেও এ ধরনের হত্যাকাণ্ড বন্ধ হয়নি। এমনকি এ ক্ষেত্রে অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা যায়নি। ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২১ জনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পুলিশ হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনে ৬ জন, পুলিশের গুলিতে ৩ জন, পুলিশ হেফাজতে ১ জন আত্মহত্যা করেছে, র্যাবের হেফাজতে শারীরিক নির্যাতনে ১ জন, বিজিবির ক্রসফায়ারে ১ জন, যৌথ বাহিনীর হেফাজতে গ্রেপ্তারের ও পরে শারীরিক নির্যাতনে ৭ জন, নৌবাহিনীর নির্যাতনে ১ জন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হেফাজতে ১ জনের মৃত্যু ঘটে। এই ২১ জনের মধ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ১২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
গণ অভ্যুত্থানে নিহত ৮৫৮ : আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মোট ৮৫৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১১ হাজার ৫৫১ জন। পত্রিকায় প্রকাশিত সূত্রে আসক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ জন নারী এবং ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু কিশোর রয়েছে ১২৯ জন। জুলাই অভ্যুত্থানে বিশেষত নিজ বাসায় গুলিতে শিশুদের মৃত্যুর ঘটনাগুলো অত্যন্ত মর্মান্তিক। এ ছাড়া নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী রয়েছেন।