ঢাকা ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের ৭২ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের মধ্যে

জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের ৭২ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের মধ্যে

২০২৪ সালে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ১ হাজার ১৩ জন নিহতের তথ্য প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস)। সংগঠনটি এক প্রতিবেদনে জানায়, যারা নিহত হয়েছেন তাদের ৭২ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের মধ্যে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি। বাংলাদেশের ১২টি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএস’র সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এইচআরএসএস’র প্রোগ্রাম অফিসার সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে ঘটে যাওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ভিকটিমের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল ও জাতীয় গণমাধ্যমের সূত্র থেকে আমরা এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৩ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছি। এছাড়াও আমরা গণমাধ্যম, হাসপাতাল ও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে যেসব বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাচ্ছি, সেসব তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি- নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ১ হাজার ২০০ জন হবে। তিনি বলেন, নিহত ১ হাজার ১৩ জনের মধ্যে ৮১৬ জনের বয়স সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে ৪ বছরের আহাদ ও ৬ বছরের রিয়া গোপসহ প্রায় সব বয়সি মানুষই রয়েছেন। ৮১৬ জনের মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সি শিশু ১৩৬ জন, যা শতকরা ১৭ শতাংশ; তরুণ বয়সি ৪৫০ জন, যা শতকরা ৫৫ শতাংশ; মধ্যবয়সি ১৯৩ জন, যা শতকরা ২৪ শতাংশ; বয়স্ক ব্যক্তি আছেন ৩৭ জন যা শতকরা ৪ শতাংশ জন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো নিহতদের মধ্যে যাদের বয়স জানা গেছে তাদের ৭২ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের মধ্যে। নিহতদের তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, ১ হাজার ১৩ জনের মধ্যে ৯১৪ জনের নাম জানা গেলেও ৯৯ জনের নাম জানা সম্ভব হয়নি। নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী, সাংবাদিক, পেশাজীবী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, শিশু ও নারীসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থক রয়েছেন। আন্দোলনে কমপক্ষে ১৩৬ জন শিশু, ৬ জন সাংবাদিক, ৫১ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং ১৩ জন মেয়ে শিশু ও নারী নিহত হয়েছেন। পেশাভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে ৭০০ জনের পেশা সম্পর্কে জানা গেছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ২৭৯ জন, যা শতকরা ৪০ শতাংশ; শ্রমজীবী আছেন ২৬৯ জন। যা শতকরা ৩৮ শতাংশ; আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ৫১ জন, যা শতকরা ৪ শতাংশ; বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ি ৩৪ জন, যা শতকরা ৫ শতাংশ ও পেশাজীবী রয়েছেন ৬৭ জন, যা শতকরা ১০ শতাংশ। নিহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ৭৮ শতাংশের বেশি। নিহতদের ধরন সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরে সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে মোট ৮৫৮ জনের মৃত্যুর ধরন সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৭১ জন গুলিতে নিহত হয়, যা শতকরা ৭৮ শতাংশ; ৯৫ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গেছেন, যা শতকরা ১১ শতাংশ; ৬১ জনকে পিটিয়ে মারা হয়েছে, যা শতকরা ৭ শতাংশ; অন্যান্য কারণে মারা গেছেন ৩১ জন, যা শতকরা ৪ শতাংশ। গণঅভ্যুত্থানে ঘটে যাওয়া বিপ্লবে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত বাহিনী বা গোষ্ঠীর তথ্য তুলে ধরে তিনি আরো বলেন, গণঅভ্যুত্থানে ঘটে যাওয়া বিপ্লবে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত বাহিনী বা গোষ্ঠীর বিষয়ে ৬৭৫ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, শুধু পুলিশের হামলায় ৫১০ জন, যা শতকরা ৭৬ শতাংশ; অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ৬৩ জন, যা শতকরা ৯ শতাংশ; আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে ৫৯ জন, যা শতকরা ৯ শতাংশ; গণপিটুনিতে ৪৩ জন, যা শতকরা ৬ শতাংশ। পুলিশ ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহতের সংখ্যা ৮৫ শতাংশের বেশি বলেও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। গণঅভ্যুত্থানে বিভাগ ভিত্তিক নিহতের তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, নিহত ১ হাজার ১৩ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ঢাকা বিভাগে ৬৫৫ জন ও সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে ১১ জন। সংবাদ সম্মেলনে এইচআরএসএস’র নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে বিপুলসংখ্যক মানুষ আহত ও নিহত হয়েছেন। মাত্র দুই মাসে যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, আমাদের ৫৩ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর নেই। এ সময় এমন কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নেই যা ঘটেনি। সংবাদ সম্মেলনে এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এইচআরএসএস’র জয়েন্ট সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান, ডকুমেন্টেশন অফিসার জবা ইয়াসমিন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত